বিবর্তনের আর্কাইভ
ভ্রান্ত ধারণা
বিবর্তন মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্য নয়
প্রতিটা নতুন ফসিল আবিষ্কার বিবর্তন তত্ত্বের জন্য একটি পরীক্ষা। একটি ফসিলও যদি বিবর্তনের ধারার বাইরে পাওয়া যায় সেই মাত্র তত্ত্বটি ভুল বলে প্রমানিত হবে। একবার বিজ্ঞানী জেবি এস হালডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কিভাবে বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করা যায়? উত্তরে হালডেন বলেছিলেন,
কেউ যদি প্রক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল খুঁজে পায়।
বলা বাহুল্য এ ধরনের কোন ফসিলই এ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয় নি। না হওয়ারই কথা, কারণ বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের যে ধারাটি আমাদের দিয়েছেন তা হল -
মাছ উভচর সরীসৃপ স্তন্যপায়ী প্রানী।
খরগোশ যেহেতু একটি পুরোপুরি স্তন্যপায়ী প্রাণী, সেহেতু সেটি বিবর্তিত হয়েছে অনেক পরে এবং বিভিন্ন ধাপে (মাছ থেকে উভচর, উভচর থেকে সরিসৃপ এবং সরিসৃপ থেকে শেষ পর্যন্ত খরগোশ), তাই এতে সময় লেগেছে বিস্তর। প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল পাওয়ার কথা নয়, কারণ বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী এ সময় (প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে) থাকার কথা কতকগুলো আদিম সরল প্রাণ – যেমন নিলাভ সবুজ শৈবাল, সায়নোব্যকটেরিয়া ইত্যাদি (ফসিল রেকর্ডও তাই বলছে)। আর স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে ট্রায়োসিক যুগে (প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগ শেষ হওয়ার ৩০ কোটি বছর পরে)। কাজেই কেউ সেই প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল খুঁজে পেলে তা সাথে সাথেই বিবর্তনতত্ত্বকে নস্যাৎ করার জন্য যথেষ্ট হত[1]।
অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স এবং জেরি কয়েন তাদের একটি প্রবন্ধে সেজন্যই বলেছেন[2] -
সত্যি কথা বলতে কি, একটি খাঁটি ফসিলও এখন পর্যন্ত কোন ‘ভুল’ জায়গায় পাওয়া যায়নি - যা বিবর্তনের ধারাবাহিকতাকে ক্ষুন্ন করতে পারে। যদি এমন কোন ‘বেমানান’ ফসিল কখনও পাওয়া যেত, তাহলে এক নিমেষেই বিবর্তনতত্ত্বের সলিল সমাধি ঘটতো।
এ ছাড়া নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলো সহজেই বিবর্তন তত্ত্বকে মিথ্যা-প্রতিপাদন করতে পারে[3] -
যদি কেউ স্ট্যাটিক ফসিল রেকর্ড (অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে ফসিল রেকর্ডের কোন পরিবর্তন না পাওয়া গেলে) খুঁজে পায়।
যদি কেউ বোরাক, সেন্টুর (অশ্বমানব) কিংবা মারমেইডের (মৎসকন্যা) মতো হাইব্রিড প্রাণী খুঁজে পায় - যারা বিভিন্ন প্রজাতির কিংবা পরষ্পর সম্পর্কহীন বিভিন্ন শ্রেনীর জীবদেহের বিভিন্ন অংগ প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত হবে, এবং যে সমস্ত প্রাণীর উদ্ভবকে আনুভূমিক জিন সঞ্চালন, সিমবায়োসিস বা অন্য কোন উপায়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
জুরাসিক যুগের শিলায় (১ কোটি ৪৪ লাখ বছর পুরনো) ডায়নোসরের ফসিলের সাথে আধুনিক মানুষের জীবাশ্ম খুজে পেলে।
যদি কোন প্রক্রিয়ার সন্ধান পাওয়া যায় যা পরিব্যক্তিকে পুঞ্জীভূত হতে বাঁধা দিবে।
অলৌকিক উপায়ে (বা জেনেটিক ধারা ভেঙ্গে) কোন প্রানীর 'সৃষ্টি' হওয়া পর্যবেক্ষণ করা গেলে।
ফসিল রেকর্ডের সাথে জেনেটিক্সের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের যদি মিল না পাওয়া গেলে কিংবা আনবিক জীববিজ্ঞান এবং তুলনামূলক জেনেটিক্সের তথ্য থেকে একই উপসংহারে পৌঁছনো না গেলে । অর্থাৎ জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে পাওয়া তথ্য যদি পরষ্পরবিরোধী হয় তাহলেই বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে আবার নতুন অরে চিন্তা করার প্রশ্ন আসবে।
উল্লেখ্য যে মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্যতার ধারণাটা বিজ্ঞানের দার্শনিক কার্ল পপার ’৩০ এর দশকে প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবনার ব্যাখ্যাকে পরে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে, নয়ত অনেক বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমই বাতিল হয়ে যেতে[4] ।
[1] অভিজিৎ রায়, বিবর্তনের সহজ পাঠ, যুক্তি, সংখ্যা ৩, জানুয়ারী ২০১০
[2] Richard Dawkins and Jerry Coyne, One side can be wrong, The Guardian, Thursday 1 September 2005 :
'And - far more telling - not a single authentic fossil has ever been found in the "wrong" place in the evolutionary sequence. Such an anachronistic fossil, if one were ever unearthed, would blow evolution out of the water'.
[3] Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press; 2007
[4] বিবর্তন সম্পর্কে ১৫টি ভুল ধারণা (সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত জন রেনির “15 Answers to Creationist Nonsense”, জুলাই ২০০২ প্রবন্ধের অনুবাদ), পৃথিবী, মুক্তমনা