বিবর্তনের আর্কাইভ
ভ্রান্ত ধারণা
লুই পাস্তুর প্রমাণ করেছিলেন যে জড় থেকে জীবের উদ্ভব হতে পারে না, শুধু জীব থেকেই জীবের উদ্ভব হয়।
১) পাস্তুর তাঁর বিখ্যাত পরীক্ষার সাহায্যে যেটা দেখিয়েছিলেন তা হল, জীবাণুমুক্ত নিয়ন্ত্রিত (পাস্তুর প্রদত্ত) পরিবেশে প্রাণ আপনা আপনি জন্ম নেয় না; কিন্তু অন্য পরিবেশে অন্য ভাবে যে কখনই জন্ম নিতে পারবে না - এই কথা কিন্তু পাস্তুরের ফলাফল হলফ করে বলেনি[1]।
২) পাস্তুরের পরীক্ষা স্বতঃজননবাদকে (Theory of spontaneous generation) ভুল প্রমাণ করেছে। স্বতঃজননতত্ত্বের দাবীদারদের সবাই বিশ্বাস করতেন জটিল জীব তার পূর্ণ অবয়বে নিজে নিজেই 'সৃষ্টি' হয়। যেমন, এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন কিছু মাছ এবং পতংগের মত ছোট প্রানী স্বতঃস্ফুর্তভাবে উদ্ভুত হয় । ব্রিটিশ গবেষক আলেকজান্দার নীডহ্যাম (১১৫৭-১২১৭) বিশ্বাস করতেন ফার গাছ সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে ফেলে রাখলে তা থেকে রাজহাঁস জন্ম নেয়। জ্যান ব্যাপটিস্ট হেলমন্ট (১৫৮০-১৬৪৪) ভাবতেন ঘর্মাক্ত নোংরা অন্তর্বাস ঘরের কোনায় ফেলে রাখলে তা থেকে ইঁদুর আপনা আপনিই জন্ম নেয়। বিজ্ঞানী পুশে (১৮০০-১৮৭২) বিশ্বাস করতেন খড়ের নির্যাস থেকে ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীব স্বতঃস্ফুর্তভাবেই জন্ম নেয়[2]। পাস্তুরের গবেষণা মূলতঃ এই ধরণের 'সৃষ্টিবাদী' ধারণাকেই বাতিল করে দেয়। কিন্তু পাস্তুরের পরীক্ষা কিংবা জৈবজনির কোন সূত্রই বলে না যে, প্রাথমিক জীবন জড় পদার্থ থেকে তৈরি হতে পারবে না[3]।
৩) বিজ্ঞানী ওপারিন[4] এবং হালডেন[5] তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, সাড়ে চারশ কোটি বছর আগেকার পৃথিবী কিন্তু কোন দিক দিয়েই আজকের পৃথিবীর মত ছিল না। তাদের মতে, আদিম বিজারকীয় পরিবেশে একটা সময় বিদ্যমান গ্যাসের উপর উচ্চশক্তির বিকিরণের প্রভাবে নানা ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থের উদ্ভব হয়েছিলো জড় পদার্থ থেকেই। এগুলো পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে আরো জটিল জৈব পদার্থ উৎপন্ন করে। এ থেকেই পরবর্তীতে ঝিল্লি তৈরী হয়। ঝিল্লিবদ্ধ এসব জৈব পদার্থ বা প্রোটিনয়েড ক্রমে ক্রমে এনজাইম ধারণ করতে থাকে আর বিপাক ক্রিয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। এটি একসময় এর মধ্যকার বংশগতির সংকেত দিয়ে নিজের প্রতিকৃতি তৈরী করতে ও বা পরিব্যক্তি বা মিটেশন ঘটাতে সক্ষম হয়। এভাবেই একটা সময় তৈরী হয় প্রথম আদি ও সরল জীবনের। ওপারিন এবং হালডেন তত্ত্বের বহু স্তরই পরবর্তী গবেষকদের পরীক্ষালব্ধ গবেষণায় (Urey–Miller, 1953[6], 1959[7] Fox 1960[8]; Fox and Dose 1977[9], Cairn-Smith 1985[10], de Duve 1995[11], Russell and Hall 1997[12]; Wächtershäuser 2000[13], Smith et al. 1999[14], Huber et al. 2003[15]) সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
[1] অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমদে,মহাবিশ্বের প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, অবসর, ২০০৭ (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত ২০০৮)।
[2] অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমদে,মহাবিশ্বের প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, অবসর, ২০০৭ (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত ২০০৮)।
[3] Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press, 2007, p 43.
[4] Oparin, A. I., Origin of Life. New York: Dover, 1952
[5] Haldane JBS, The Origins of Life, New Biology, 16, 12–27 (1954).
[6] Miller, Stanley L., "Production of Amino Acids Under Possible Primitive Earth Conditions" Science 117 (3046): 528, 1953
[7] Miller, Stanley L.; Harold C. Urey, "Organic Compound Synthesis on the Primitive Earth". Science 130 (3370): 245, 1959
[8] Fox, S. W. How did life begin? Science 132: 200-208, 1960.
[9] Fox, S. W. and K. Dose. Molecular Evolution and the Origin of Life, Revised ed. New York: Marcel Dekker, 1977.
[10] Cairn-Smith, A. G. Seven Clues to the Origin of Life, Cambridge University Press, 1985.
[11] de Duve, Christian, The beginnings of life on earth. American Scientist 83: 428-437, 1995
[12] Russell, M. J. and A. J. Hall, The emergence of life from iron monosulphide bubbles at a submarine hydrothermal redox and pH front. Journal of the Geological Society of London 154: 377-402, 1997.
[13] Wächtershäuser, Günter, Life as we don't know it. Science 289: 1307-1308, . 2000.
[14] Smith, J. V., F. P. Arnold Jr., I. Parsons, and M. R. Lee. 1999. Biochemical evolution III: Polymerization on organophilic silica-rich surfaces, crystal-chemical modeling, formation of first cells, and geological clues. Proceedings of the National Academy of Science USA 96(7): 3479-3485.
[15] Huber, Claudia, Wolfgang Eisenreich, Stefan Hecht and Günter Wächtershäuser. 2003. A possible primordial peptide cycle. Science 301: 938-940.