বাসুনকে, মা
লুনা শীরিন
পর্ব ১২

বাসুন,

তোকে এই চিঠি লিখতে গিয়ে মনে হয় অমি একটা  ঝামেলায় পড়লাম রে সোনা। কারন একটা  পর্ব পোষ্ট করার পর পরই আমি ভাবতে থাকি  পরের পর্বে কি লিখবো। যদিও  চিঠিটা একান্ত ব্যক্তিগত, কিন্তু তবুও তো নিজেকে প্রকাশ করা তাই না বাসুনমাঝে বেশ কিছুদিন লিখতে পারিনি, আজ এখন রাত প্রায় পৌনে বারোটা, আগামীকাল তোর স্কুল বন্ধ বলেই ল্যাপটপে বসে পড়লাম

খুব বেশী অবাক হচ্ছি আজকে  প্রথম আলোতে (২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭) মুহাম্মদ জাফর ইকবালের প্রতিপক্ষ যখন ছাত্র শিক্ষক লেখাটি পড়েআসলেই দেশের ভিতরে কি চলছে সেটা যদি দেশে থেকেও তাদের মতো ব্যক্তিত্বরা ঠিকমতো বলতে না পারেন, তাহলে পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে বসে আমরা কি করে জানতে পারবো সত্যটা কি? অথচ আমি পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন তথ্য পেতে অসুবিধা কোথায়?  জাফর ইকবাল এর আগেও বেশ কঠিন করে কিছু কথা লিখেছেন। অথচ এসব কথার কোথাও  যদি কোন রিফ্লেকশন না পড়ে, বর্তমান সরকার যদি কারো কোন কথা কানে না তুলে নিজেদের পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে থাকেন তবে আর দেশে  বসে সুশীল সমাজ ও অনান্য শিক্ষকরা ঘাষ কাটলেই পারেন বাংলাদেশ থেকে চলে আসার আগেই বেশ কিছু মহান ব্যাক্তিত্বদের  সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো আমার। ইকবাল স্যারের লেখাটা পড়ছিলাম আর আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো  তাদের চেহারা। এই যেমন, প্রফেসর খান সারোয়ার মুরশিদ, প্রফেসর আনিসুর রহমান, প্রফেসর আনিসুজ্জামান, সরদার ফজলুল করিম, সেলিনা হোসেন।  তাহলে এরা সবাই কি আজ চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছেন? এই যে মোহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কার্টুনের  মতো এত বড় ঘটনা, ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে সাজানো নাটক, প্রথম আলোর পদলেহন, তাহলে কি সবাই মুখে তালা মেরে শুধু বেঁচে থাকার কথা ভাবছেন? আমার আরো জানতে ইচ্ছে করে আজকে যারা  তত্বাবধায়ক সরকারের সাথে একাত্ব হয়ে কাজ করছেন যেমন, দুদুক সচিব মখলেসউর রহমান যাকে একজন স সরকারী কর্মকর্তা বলে আগাগোড়া ব্যক্তিগতভাবে জেনে এলাম ,অর্থসচিব জনাব ডঃ তারেক, ছোটবেলায় যার মেধা দেখে মনে হতো আহ যদি এমন মেধা নিয়ে জন্মাতাম? শিক্ষা সচিব জনাব আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া যাকে আমি  সেই  পিএটিসি থেকে একজন নামকরা আপোসহীন  ব্যক্তিত্ব বলে বিশ্বাস  করি, তাহলে এরাও কি দেশের এই সব নোংরা ষড়যন্ত্রের অংশ? নইলে এরা চাকরি টিকিয়ে রাখছেন কি করে ? দেশের ভিতরের অবস্থা ভালো না খারাপ সেই বিবেচনায় যদি নাও যাই, এটা তো জানতে চাইবো যে  দেশে কিছু মানুষ আছেন যারা সত্যিকার অর্থেই মানুষ বা অন্তত মেরুদন্ডহীন প্রানী নন

রাত গভীর  হচ্ছে সোনা, তুই পাশের বিছানাতে ঘুমিয়ে পড়েছিস অনেক আগেই। আর আমি ফিরে গেছি আমার ফেলে আসা পিছনের ১৫ বছরে। বাবা  ভালো সরকারী চাকরি করতেন বলেই অনেক ধরনের মানুষের সাথে  উঠাবসার সুযোগ ছিলো। এর পর  নিজে কাজ করেছি বেসরকারী প্রতিষ্টানগুলাতে। দেশের প্রতিদিনের খবরের সাথে সাথে সব ছবিগুলো চোখের  সামনে ভেসে  উঠছে , আর  মনে পড়ছে ইকবাল স্যারের লেখার প্রতিটা লাইনদেশে কি কেউ এই লেখাটি পড়বে না? কেউ কি জল্বে উঠবেন না? যারা এই সরকারের সাথে  হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তাদের ভিতর কি কেউ নেই যিনি টু শব্দটি করতে পারেন বা বলতে পারেন যে এটা উচিত বা এটা অনুচিত? একটু আগে একজন ইমেল করে লিখেছে যে দেশে এখন  যা হচ্ছে তা পুরোটাই এরশাদ শাসনের কার্বন কপি। তাহলে কি আবার দেশে আন্দেলন করে  সরকারকে নামাতে হবে ? আবার প্রান দিতে হবে নূর হোসেনদের? আর কবে একটি দেশ সুস্থীর হয়ে  উন্নয়ন-অনুন্নয় ভাবনায় মন দেবে? কি করেন দেশের প্রধান প্রধান এনজিও ব্যক্তিত্বরা? জনাব ফজলে হাসান আবেদ, প্রফেসর ইউনুস, সুলতানা কামাল, হামিদা হোসেন বা নিদেনপক্ষে খুশি কবির? সবাই কি মনে করেন, না আমরা এনজিও চালাই এসব কথার ভিতর আমার যাবার দরকার কি? তাহলে কারা কথা বলবেন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কারা গড়ে তুলবেন নতুন প্রজন্ম? নাকি ইকবাল স্যারের ভাষায় গড়ে উঠবে নতজানু এক প্রজন্ম যারা গড়ে তুলবে আরো ভয়াবহ এক রাষ্ট্র যেখানে মানুষের বদলে থাকবে কিছু গৃহপালিত প্রানী? আমার মুখে আর কথা সরছে না রে বাসুন। আমি এবার ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘুমাতে যাবো

তোর মা,                                                                                                    ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭

Email:lunasamir@yahoo.com

পর্ব ১১                                                                             পর্ব ১৩