পরকালের পরাবাস্তবতা
আশা জেগে রয় চিরন্তন

বিজ্ঞান, পরলোক এবং জীবনের অর্থ

মূলঃ মাইকেল শারমার

ভাষান্তরঃ ফরিদ আহমেদ 

দ্বিতীয় পর্ব

(পর্ব ৩)

কোয়ান্টাম সচেতনতা

দীপক চোপড়া এবং অন্যেরা হয়তো পালটা যুক্তি দেবে যে, psi এর অকাট্য তত্ত্ব রয়েছে এবং তা হচ্ছে কোয়ান্টাম সচেতনতাদারুণ জনপ্রিয় এবং একটা অদ্ভুত ধরনের নামের চলচ্চিত্র ‘What the Bleep! Do We Know!?’ তে কোয়ান্টাম সচেতনতা দেখানো হয়েছে চাতুর্যপূর্ণ সম্পাদনা এই চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী মার্লি ম্যাটলিন একজন স্বপ্নালু ফটোগ্রাফারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রটি আপাত অর্থহীন মহাবিশ্বকে অর্থপূর্ণ করার চেষ্টা করছে চলচ্চিত্রটির মূল বিষয় হচ্ছে সচেতনতা আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের বাস্তবতা তৈরি করি ছবিটি যে সপ্তাহান্তে মুক্তি পেয়েছিল তার আগেই এর প্রযোজকের সাথে ওরিগনের পোর্টল্যান্ডে একটি টেলিভিশন শোতে আমার দেখা হয়েছি ফলে, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার আগেই আমি ছবিটি দেখে ফেলেছিলাম আমি কখনোই ভাবি  নাই যে, সচেতনতা এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর কোন চলচ্চিত্র সফল হতে পারে কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে ছবিটা কয়েক মিলিওন ডলার আয় করে ফেলে এবং এর একধরনের একটা কাল্ট অনুসারীও তৈরি হয়ে যায়

 

এই চলচ্চিত্রের অবতাররা হচ্ছেন গোঁড়া নিউ এজ পন্থী বিজ্ঞানীরা  নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ক্যালটেক পদার্থবিদ মুরে গেল-ম্যানের ( Murray Gell-Mann) ভাষায়, এদের তত্ত্বকথার ফুলঝুরি, কোয়ান্টাম বকবকানি ছাড়া আর কিছুই নয়যেমন ধরুন ইউনিভার্সিট অব অরিগনের কোয়ান্টাম পদার্থিবিজ্ঞানী অমিত গোস্বামী বলেছেন যে, আমাদের চারপাশের বস্তুগত জগত সম্ভাব্য সচেতনতার নড়চড় ছাড়া আর কিছুই নয় আমি প্রতি পলে পলে আমার অভিজ্ঞতা বেছে নিচ্ছি হাইজেনবার্গ বলেছেন পরমাণুসমূহ বস্তু নয়, বরং প্রবনতা ঠিক আছে অমিত আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছিপারলে বিশ তলা বিল্ডিং এর উপর থেকে লাফিয়ে পড়ুন এবং ভূমির প্রবনতার মধ্য দিয়ে নিরাপদে অতিক্রম করে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সচেতনভাবে বেছে নিন

 

The Message of Water গ্রন্থের জাপানী লেখক গবেষক মাসুরা এমোটোর গবেষণা হচ্ছে কীভাবে মানুষের চিন্তা বরফের ক্রিস্টালের আকৃতি পরিবর্তন করে দেয় তা দেখানো এক গ্লাস পানি তার চারপাশে ভালবাসা শব্দ জড়িয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত বেশ কিছু ক্রিস্টালে পরিণত হয়ে যায় আবার এলভিস প্রিসলির ‘Heartbreak Hotel’ বাজালে এক টুকরো ক্রিস্টাল ভেঙ্গে দুই টুকরায় পরিণত হয়তাহলে কি এলভিসের ‘Burnin’ Love’ বাজালে পানি ফুটতে শুরু করবে? তাইতো হওয়ার কথা, তাই না?

 

ছবিটারর সবচেয়ে দুর্বলতম অংশ হচ্ছে ৫৮ বছর বয়স্কা মহিলা J. Z. Knight শরীরের মধ্যে ভর করা ৩৫০০০ বছর বয়সী প্রেতাত্মা রামথার সাক্ষাকার আমার ভাবনা হচ্ছে ৩৫০০০ বছর আগে কোন অঞ্চলের মানুষ ভারতীয় উচ্চারণে ইংরেজীতে কথা বলতো কে জানে চলচ্চিত্রের অনেক প্রযোজক, লেখক এবং অভিনেতারা রামথার ‘School of Enlightement’ এর সদস্য এই স্কুলে সপ্তাহান্তে নিউ এজ এর ধ্যান ধারণা শেখানো হয়

 

কোয়ান্টাম জগতের অদ্ভুতুড়তার সাথে (যেমন, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সূত্র, যেখানে বলা হয়েছে যে যখনই কোন কণিকার অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়, তখনই তার গতি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এর উল্টোটাও হতে পারে যেখানে গতি নিশ্চিতভাবে জানা গেলে অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়ে) বৃহ জগতের রহস্যময়তার ( যেমন সচেতনতা) সংযোগ সাধনের চেষ্টা নতুন কিছু নয় এ দুটোর সর্বোত্তম সংযোগ ঘটিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী রজার পেনরোজ এবং চিকিসক স্টুয়ার্ট হ্যামেরফ যাদের কোয়ান্টাম তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক মহলে আলোর চেয়ে উত্তাপই বেশি পরিমাণে ছড়িয়েছিল

 

আমাদের নিউরনের মাঝখানে কিছু ক্ষুদ্রাকৃতির ফাঁপা মাইক্রোটিউবুলেস আছে যেগুলো কাঠামোগত খুঁটি হিসাবে কাজ করে ধারণা  (এবং এটা শুধু ধারণাই, আর কিছু নয়) করা হয় যে, মাইক্রোটিউবুলেসের মধ্যে কোন কিছু হয়তো ওয়েভ ফাংশন পতনের একটা সূত্রপাত ঘটায়, যার ফলে পরমাণুগুলোকোয়ান্টাম সমন্বয়ের সৃষ্টি হয়।পরিণতিতে নিউরনসমূহের মাঝে সিনাপ্সে নিউরোট্রান্সমিটার নির্গমন হয় এবং এর ফলে তারা একসাথে একইভাবে বিকশিত হয়ে চিন্তা এবং সচেতনতা তৈরি করে যেহেতু ওয়েভ ফাংশনের পতন কেবলমাত্র কোন পরমাণু পর্যবেক্ষিত (কোন কিছু দিয়ে যে কোনভাবে প্রভাবিত হলে) হলেই ঘটতে পারে, সেহেতু এই ধারণার আরো একজন প্রস্তাবক স্নায়ুবিজ্ঞানী স্যার জন একলেস (John Eccles) বলেন যে, খুব সম্ভবত মনই হয়তো অণু থেকে পরমাণু, নিউরন, চিন্তা, সচেতনতার পৌণপুণিক চক্রের পর্যবেক্ষক

 

বাস্তবে, সাব এটোমিক কোয়ান্টাম এফেক্ট এবং বৃহ  আকারের ম্যাক্রো সিস্টেমের ব্যবধান এতো বেশি যে তাদের মধ্যে সংযোগ সাধন সম্ভবপর নয় কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টিকল পদার্থবিজ্ঞানী ভিক্টর স্টেনগার তার গ্রন্থ The Unconcious Quantum - এ দেখিয়েছেন যে একটি সিস্টেমকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স হিসাবে বর্ণনা করতে হলে এর গড় m, গতি v এবং দূরত্ব d কে অবশ্যই প্লাঙ্কের (Planck) ধ্রুবক h এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবেযদি mvd, h এর চেয়ে অনেক বেশি হয় তাহলেই কেবল সিস্টেমকে মেনে নেওয়া যেতে পারে স্টেনগার হিসাব করে দেখেছেন যে, সিন্যাপ্সের দূরত্বে নিউরাল ট্রান্সমিটার মলিকিউলস এর ভর এবং তাদের গতি প্রায় তিনগুন বেশি, যা কোয়ান্টাম প্রভাবকে কার্যকর করার জন্য খুব বেশি বড় মাইক্রো-ম্যাক্রো সংযোগ বলে কিছু নেই যখন তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হয় তখন সাব এটোমিক পার্টিকলগুলো হয়তো পরিবর্তিত হয়, কিন্তু চাঁদ ঠিকই চাঁদের জায়গায় থেকে যায় তা সে কেউ তার দিকে তাকাক বা না তাকাক কি যে ঘোড়ার আন্ডাটা হচ্ছে এখানে কে জানে?

 

বিজ্ঞানের ইতিহাস মনের অন্তর্নিহিত কার্যাবলী ব্যাখ্যা করার অসংখ্য স্বাপ্নিক কিন্তু ব্যর্থ কর্মকাণ্ড দিয়ে ভর্তি সকল মানসিক কার্যাবলীকে ঘূর্ণায়মান পরমাণু, যা মূলতঃ এগিয়ে যাচ্ছে চেতনার দিকে, তার কার্যাবলী হিসাবে ব্যাখ্যা করা থেকেই এই কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে প্রায় চারশ বছর আগে ডেকার্ট (Descarte) এর বিখ্যাত উচ্চাকাঙ্খী প্রচেষ্টা থেকে এই ধরনের কার্টেসিয়ান স্বপ্ন এক ধরনের নিশ্চয়তা প্রদান করে, কিন্তু খুব দ্রুত তা জীববিজ্ঞানের জটিলতার মুখোমুখি হয়ে ফিকে হয়ে যায় আমাদের উচিত  স্নায়বীয় পর্যায়ে এবং আরো উঁচুতে চেতনার খোঁজ করা যেখানে কার্যকারণ বিশ্লেষণ উত্থান এবং আত্ম-সংগঠনের মত নীতির দিকে দিক নির্দেশ করেছে

 

সাইকিক মাধ্যমতা এবং মৃতের সাথে কথা বলা

 

দীপক চোপড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেছেন সেই গবেষণায় তিনজন সাইকিক দাবি করছিল যে তারা পরলোকে চলে যাওয়া লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারে যদিও কোন সাইকিককেই বলা হয়নি যে দীপক সেখানে উপস্থিত ছিল, তা সত্ত্বেও দুইজন তাকে নাম ধরে সনাক্ত করে ফেলেছিল। দুইজন বলেছিল যে সে তার সদ্য মৃত বাবার সাথে যোগাযোগ করতে চায় এবং এর মধ্যে একজন তার ছেলেবেলার ডাক নামও কিভাবে যেন জানতো দীপক এই অভিজ্ঞতাকে খাঁটি অভিজ্ঞতা বলে দাবি করেছেন যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে, তার এ বিষয়ে মনে কিঞ্চি খুঁতখুঁতানি ছিল। বিশেষ করে যেহেতু  দীপকের মতে, পরলোক থেকে আসা আমার বাবা ততটুকুই জিনিষই জানতো যতটুকু আমি জানি, তার চেয়ে বেশি কিছু না

 

এই কিঞ্চি খুঁতখুঁতানি বেশিরভাগ লোকের সন্দেহবাতিকতার চেয়েও বেশি সন্দেহবাদী, বিশেষ করে এমন একটি আবেগপ্রবন লেখায় যেখানে মৃত ভালবাসার জনদের সাথে সংযোগ সাধনের প্রতিশ্রুতি দেয় সাইকিকেরা কীভাবে মৃতদের সাথে কথা বলে? আমি এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি করেছি তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় এটা এমন একটা চালাকি যেখানে দুটো কৌশলের বিশেষ প্রয়োজন হয়

 

. কোল্ড রিডিং বা সবজান্তার ভান করাঃ এখানে আপনি আক্ষরিক অর্থেই কারো সম্পর্কে কিছু না জেনেই ভান করবেন যে তার সম্পর্কে সবকিছু জানেন আপনি অনর্গল প্রশ্ন করবেন এবং অসংখ্য মন্তব্য করেন এবং দেখবেন যে কোনটা ঝড়ে বক মরের মতো লেগে যায়আমি অক্ষরের নাম পাচ্ছি দয়া করে বলবেন কি কে এটা? উনি আমাকে লাল রঙের একটা কিছু দেখাচ্ছেনকী সেটা, প্লিজ? এরকম করে চলবে আরো কিছুক্ষণ বেশিরভাগ মন্তব্যই হবে ভুলভাল ধরনেরতাতে অবশ্য কোন সমস্যা নেই।  B.F. Skinner তার কুসংস্কারাচ্ছন্ন আচরণের উপর পরীক্ষায় যেমন দেখিয়েছেন যে, লোকজনের শুধু দরকার মাঝে মাঝে তাদেরকে বুঝ দেওয়া যে সত্যি সেখানে কিছু একটা আছে ( স্লট মেশিনে জুয়াড়িদের আটকে রাখার জন্য মাঝে মাঝেই তাদেরকে জিততে দিতে হয়) এই ভণ্ড  সাইকিকদের জারিজুরি ফাঁস করার উপর আমার করা WABC নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে সাইকিক যখন নামধাম, তারিখ, রঙ, রোগব্যাধি, অবস্থা, পরিস্থিতি, আত্মীয়স্বজন, স্মারকবস্তুসমূহ এবং অন্যান্য বিষয় দ্রুতগতিতে বলে যাচ্ছিল তখন আমরা প্রথম মিনিটেই প্রায় প্রতি সেকেন্ডে একটি করে মন্তব্য গুনতে সক্ষম হয়েছিলাম সাইকিকরা এতো দ্রুত গতিতে কথা বলে যে আপনাকে টেপ থামিয়ে পিছনে যেয়ে দেখতে হবে যে আসলে কি বলা হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানের সাইকিকের সাফল্যের হার ছিল দশ শতাংশের চেয়েও কমআর ওই দশ শতাংশ সাফল্যের ব্যক্তিরা ছিল তারাই যারা মনে মনে সুতীব্রভাবে চাচ্ছিল যেন তারা তাদের মৃত প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করতে পারে

 

. ওয়ার্ম রিডিং বা জ্ঞাত মনোবিজ্ঞানের নিয়মের প্রয়োগঃ ওয়ার্ম রিডিং সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনোবিজ্ঞানের জানা নীতিগুলোকে ব্যবহার করে ব্রিটিশ মনোবিশারদ এবং যাদুকর ইয়ান রোল্যান্ড (Ian Rowland) এর সাইকিক অনুমান কীভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে অন্তর্জ্ঞানসম্পন্ন এবং বিশ্বকোষিক গ্রন্থ The Full Facts Book of Cold Reading বেশিরভাগ বাড়িতেই পাওয়া যাবে এমন সব বস্তুসমূহকে যাতে করে নিশ্চিতভাবে কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে যে তাদের মৃত প্রিয়জন কক্ষে উপস্থিত আছে সহ উচ্চ সাফল্য সম্ভাবনাসম্পন্ন অনুমানসমূহের তালিকা প্রদান করেছে। তালিকার বিষয়গুলো এরকমঃ এক বাক্স পুরাতন ফটো, তার মধ্যে কিছু এলবামে সাঁটা, কিছু এলবামের বাইরে; পুরনো ওষুধপত্র, মেয়াদ উত্তীর্ণ মেডিক্যাল সাপ্লাই, খেলনা, বই, শৈশবের কোন স্মৃতি চিহ্ন; পরিবারের মৃত কোন ব্যক্তির গয়নাগাটি; এক প্যাকেট তাস, যার মধ্যে একটা আবার খোয়া গেছে; নষ্ট হয়ে যাওয়া ইলেকট্রোনিক কলকবজা; হারিয়ে যাওয়া মানানসই কলম বাদে নোট প্যাড বা মেসেজ বোর্ড; ফ্রিজের গায়ে লাগানো বা টেলিফোনের পাশে রাখা জীর্ণ নোট; কোন শখের বিষয়ের উপর লেখা বই, পুরনো ক্যালেন্ডার, আটকে যাওয়া বা ঠিকমত খোলে না এমন কোন ড্রয়ার; হারিয়ে যাওয়া চাবি; নষ্ট হয়ে যাওয়া ঘড়ি ইত্যাদি অতিপ্রাকৃত কিছু আছে বলে যারা ধারণা দিতে বাধ্য তাদের কিছু সাধারণ বিচিত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ হাটুতে দাগ, বাড়ীর ঠিকানায় ২ সংখ্যার উপস্থিতি; শৈশবে পানিতে পড়া জাতীয় দুর্ঘটনা, কোনদিন পুরাতন না হওয়া কোন পোশাক; ওয়ালেট বা পার্সে প্রিয়জনের ছবি; ছেলেবেলায় চুল বড় রাখা হত, কিন্তু বড় হয়ে ছোট চুল রাখা; জোড়ার একটা হারিয়ে যাওয়া কানের দুল ইত্যাদি ইত্যাদি জেমস ভ্যান প্রাগ, সিলভিয়া ব্রাউন, রোজমেরি আলটিয়া এবং অন্যান্য মিডিয়াম যাদের উপর আমি ব্যাপক তদন্ত করেছি তারা সবাই মৃত্যুর কারণ হিসাবে বুক বা মস্তিষ্ক এলাকাকে চিহ্নিত করার ব্যাপারে  অত্যন্ত দক্ষ মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করার পর তারা ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় সেই মৃত্যু কি তরিত্ব গতিতে হয়েছে নাকি ধীর গতিতে হয়েছে সেদিকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে তারা মৃত্যুর অর্ধ ডজন প্রধান কারণকে বলে যেতে থাকেসে বলছে যে তার বুকে ব্যথা ছিল যদি এক্ষেত্রে তারা ইতিবাচক সাড়া পায়, তাহলে তারা এগিয়ে যেতে থাকেতার কি ক্যান্সার ছিল? কারণ আমি ধীরে ধীরে মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি যদি তারা হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়, তাহলে তারা সাথে সাথেই সাফল্যের কৃতিত্ব নিয়ে নেয় যদি আত্মীয় স্বজনরা ইতস্তত করে তবে সেক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মৃত্যুর কারণ সরিয়ে নেয় হার্ট এটাকের দিকে যদি মাথার কোন সমস্যার কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে, তাহলে তারা স্ট্রোক অথবা আছাড় খেয়ে পড়ে যেয়ে বা গাড়ি দুর্ঘটনা মস্তিষ্কের আঘাতের কথা উল্লেখ করে

 

আমি একদিন নিজেই টেলিভিশনের এক বিশেষ অনুষ্ঠানে সাইকিকের ভূমিকা পালন করেছিলাম এবং খুব সহজেই অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে আমি মৃতদের সাথে কথা বলছিএটা অবশ্য খুবই সহজ কাজ। যে কেউই  ইচ্ছা করলে মৃতদের সাথে কথা বলতে পারে কঠিন কাজ হচ্ছে মৃতদেরকে পালটা কথা বলানো সাইকিক মিডিয়ামরা চতুর কৌশল ব্যবহার করে বিভ্রম তৈরি করার মধ্য দিয়ে ধারণা দেয় যে  মৃতরা আমাদের সাথে কথা বলছে  এবং যেহেতু যারা মিডিয়ামের কাছে সাহায্যের জন্য আসে তার আবেগগতভাবে ভঙ্গুর থাকে, সেহেতু তারা খুব সহজেই মিডিয়ামদের প্রভাববিস্তারকারী পদ্ধতির ফাঁদে পড়ে যায়

পরবর্তী পর্ব

মায়ামি, ফ্লোরিডা                                                                       farid300@gmail.com

===============================================

মুক্তমনার মডারেটর, 'মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক।

লেখাটি আমাদের মুক্তমনার পরবর্তী বই -‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’– প্রকাশিতব্য সংকলন-গ্রন্থের জন্য নির্বাচিত হল - মুক্তমনা সম্পাদক।