সম্পাদকের ক্রুদ্ধ কথন
আমি প্রথমেই ‘মুক্তমনা’র পক্ষ থেকে আমান সাহেবকে স্বাগত জানাচ্ছি মুক্তমনায়। আমি যদি ভুল না করে থাকি তবে এটাই বোধহয় উনার প্রথম লেখা বা প্রতিক্রিয়া, যা তিনি মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছেন। উনার মত একজন গুণী মানুষের পদচারণা যে মুক্তমনায় পড়েছে সেজন্য আর কে কি রকম জানি না তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রচন্ড রকমের খুশি। সদালাপের তিনজন লেখকের লেখার আমি প্রচন্ড রকমের ভক্ত। এরা হচ্ছেন আ.স.ম. জিয়াউদ্দিন, আবদুর রহমান আবিদ এবং মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। যদিও আমান উল্লাহ সাহেব অন্যদের তুলনায় লেখালেখি কিছুটা কম করেন, কিন্তু তার লেখায় যে শক্তিমত্তা, সাবলীলতা, আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার ছাপ পাওয়া যায় তার তুলনা মেলা ভার। আমি অনেক বেশি খুশি হতাম যদি আমার এই প্রিয় লেখককে প্রতিক্রিয়া প্রকাশের মাধ্যমে না এসে, সরাসরি কোন লেখার মাধ্যমে মুক্তমনায় পেতাম। আমারই দূর্ভাগ্য যে উনাকে আমার কারণেই প্রতিক্রিয়া প্রকাশের মাধ্যমে মুক্তমনার আঙিনায় এসে পড়তে হলো। তবে যেভাবেই আসুন না কেন, আমান সাহেবের আগমনকে আমরা সানন্দচিত্তেই গ্রহণ করছি।
আমি অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছি যে, সদালাপ যে মতাদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে তার পুরোপুরি বিপরীত ধরনের লেখা ছাপাতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। তানবীরা, জাহেদ বা আমারসহ অনেক প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে অবিশ্বাসী লেখকদের লেখাসমূহ নিয়মিতই ছেপেছে সদালাপ। এটা যে কত বড় উদারতা, সাহসিকতা এবং সহনশীলতার কাজ সেটা পুরোপুরি না হলেও বেশ কিছুটা বুঝতে পারি। বিশ্বাসী লোকজনের সহনশীলতা কিরকম হয় সেটা মোটামুটি জানা আছে বলে সবসময়ই সদালাপের এই ইতিবাচক ভূমিকাকে মনে মনে প্রশংসা করে এসেছি আমি। সদালাপের এই সহনশীল উদার ভূমিকার জন্য অবশ্যই দুইজন ব্যক্তি যাবতীয় প্রশংসা এবং কৃতিত্বের দাবীদার। এদের একজন হচ্ছেন এর প্রতিষ্ঠাতা ভূতপূর্ব সম্পাদক আ.স.ম. জিয়াউদ্দিন এবং আরেকজন হচ্ছেন বর্তমান সম্পাদক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ।
আমি প্রথমেই আমান সাহেবকে ধন্যবাদ দিচ্ছি এ’কারণে যে আমার লেখা প্রবন্ধ ‘বাসভূমির চৌর্যবৃত্তি’তে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি সেগুলোর সাথে একমত হওয়া এবং ওই বিষয়গুলো যে মনোযোগের দাবিদার সে বিষয়ে তার লেখায় মতামত দেওয়ার জন্য। আমি আমান সাহেবের এই প্রতিক্রিয়ার পালটা জবাব লেখার ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহী ছিলাম না বললেই চলে। এর কারণ মূলতঃ দু’টি। প্রথমত এ প্রতিক্রিয়াটি আমি আমার মূল লেখায় যা বলেছি তাকে কোন রকম খণ্ডনতো করেই নাই বরং এটা আমার বক্তব্যকে আরো শক্তপোক্ত করেছে। যে প্রমাণগুলোকে আমি আমার লেখার ব্যাক আপ হিসাবে রেখে দিয়েছিলাম, আমান সাহেব তার প্রতিক্রিয়ায় সেগুলোকে তুলে ধরে আমার জন্য কাজটা বরং আরো সহজ করে দিয়েছেন। পাঠকের জন্যও খুব সহজ হয়ে গিয়েছে বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্থির সিদ্ধান্তে আসার। তা সে সিদ্ধান্ত আমার পক্ষে বা বিপক্ষে যেদিকেই হোক না কেন। সে জন্য আমি উনার প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞ। দ্বিতীয়তঃ বরাবরই তর্ক বিতর্কে আমার প্রবল অনীহা এবং আমার বিখ্যাত আলসেমির কারণে কারো লেখার পালটা জবাব দেওয়া প্রায়শই আমার পক্ষে হয়ে উঠে না। আমান সাহেব তার প্রতিক্রিয়ায় কিছু কিছু অপ্রাসংগিক এবং অসংলগ্ন মন্তব্য করেছেন যেগুলোতে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার না করলে একেবারেই চলে না বলে একান্ত বাধ্য হয়েই এ লেখাটি লিখছি। আমার ধারণা আমার লেখাটা পড়ে উনি তাৎক্ষনিক চটে গিয়ে প্রতিক্রিয়াটা লিখেছেন। আর সেকারণেই হয়তো কিছু কিছু অসংলগ্ন বিষয় উঠে এসেছে তার লেখায়। আমি নিশ্চিত রেগে না থাকলে উনি হয়তো এই অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে উল্লেখ করতেন না। আমার বিশ্বাস তিনি হয়তো নিজেই সেগুলো এখন উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।
যাই হোক, আমি বরং এক এক করে উনার অপ্রাসংগিক বিষয়গুলো উল্লেখ করে আমার অবস্থানটা বোঝাতে চেষ্টা করি। পাঠকদের সুবিধার্থে আমি আমান সাহেবের বক্তব্যকে ইটালিক করে দিয়ে তার নিচেই আমার বক্তব্য দিচ্ছি।
অন্য পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার সমালোচনা সদালাপ ছাপতে পারবেনা সেটা ফরিদ আহমেদকে কে বলেছে? একটি লেখা যখন প্রকাশিত হয় তখন সেটি আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ সেটির ক্রিটিক করতে পারে এবং যিনি ক্রিটিক করছেন তিনি তার লেখাটি তার পছন্দের পত্রিকায় পাঠাতে পারেন। যার লেখার পর্যালোচনা করা হলো, তিনিও ডিফেন্ড করতে পারেন। সদালাপ যদি তখন সেটি প্রকাশ না করে, তখন তিনি প্রতিবাদ করতে পারেন এবং সদালাপের বিরুদ্ধে পার্শিয়ালিটির অভিযোগ উঠতে পারে। সেরকম অভিযোগ কখনো ওঠেনি। বরং সদালাপ মাঝে মাঝে আপন রুচির সাথে কিছুটা কম্প্রমাইজ করে হলেও লেখকের 'রাইট টু ডিফেন্ড' কে ডিফেন্ড করে তাদের লেখা প্রকাশ করেছে।
যে কোন লেখাই সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত, এ বিষয়ে আমান সাহেবের সাথে আমি পুরোপুরি একমত। তবে একমত নই ওইখানে, যেখানে মূল লেখাটির তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয় না। মূলসূত্র উল্লেখ না করলে তখন পাঠকের পক্ষে একেবারেই বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে যে কোন লেখার কারণে লেখককে বা তার বক্তব্যকে সমালোচনা করা হচ্ছে। মুক্তমনায় প্রকাশিত কোন লেখার সমালোচনা যখন সদালাপে করা হয় তখন সদালাপের বেশিরভাগ পাঠকই অন্ধকারে থাকতে বাধ্য। সদালাপের সব পাঠকই যে মুক্তমনা পড়ে থাকেন এমন নিশ্চয়তা নিশ্চয়ই কেউ দিতে পারবেন না। লেখকের ডিফেন্ড করার অধিকার আছে এবং সদালাপ যে সেটা দেয় সে বিষয়েও আমার কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু লেখকেরও নিশ্চয় সেক্ষেত্রে স্বাধীনতা আছে কোন লেখা সদালাপে না দেওয়ার। আমার লেখার সমালোচনা হয়েছে বলেই আমাকে ডিফেন্ড করার জন্য সাততাড়াতাড়ি লেখাটা সদালাপে পাঠাতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নিশ্চয়ই আমার নেই। যিনি অন্য কোন জায়গায় প্রকাশিত লেখার সমালোচনা রেফারেন্স ছাড়াই সদালাপে পাঠিয়েছেন তাকে থামানোর দায়িত্ব সদালাপ সম্পাদকেরই বলে আমি মনে করি। আমান সাহেবও আমার সাথে এ ব্যাপারে একমত সেটা আমি জানি। তা না হলে তিনি মোঃ মোস্তফা কামাল সাহেবকে রেফারেন্স না দেওয়ার কারণে সতর্ক করে নোট দিতেন না। Time এ প্রকাশিত কোন লেখার সমালোচনা রেফারেন্স ছাড়া Economist কি প্রকাশ করবে? এর দ্ব্যর্থহীন উত্তর হচ্ছে, করবে না।
সদালাপে অনেক লেখা আসে এবং দু'একটি লেখা ওভারলুক হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। সম্পাদক ভাবলেন, হয়তো সেরকম কিছু হয়েছে, তিনি ফরিদ আহমেদকে লিখলেনঃ
অনুগ্রহ করে আপনার লেখার একটি কপি দ্রুত পাঠিয়ে দিন। আমি সামান্য ডিজঅর্গানাইজড হয়ে পড়েছিলাম। এটির জন্য দুঃখিত।
এই নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশের পর ফরিদ আহমেদ কি তার লেখাটা পাঠিয়ে দিলেন? অথচ সদালাপ সেটি প্রকাশ করলোনা? জ্বি না, ঘটনা সেরকম না। তিনি লিখলেন যে:
এখন তিনি তার আর্টিকেলটি পাঠাতে আগ্রহী নন। তিনি এপ্রিসিয়েট করবেন মোস্তফা কামালের লেখাটি নামিয়ে নিলে। তিনি মনে করছেন, সদালাপের পাঠকেরা একপেশে ধারণা পাচ্ছে যেহেতু তার লেখা মূল আর্টিকেলটি সদালাপে নেই।
আবদার দেখুন! সদালাপের সম্পাদক যেন তার মামা লাগে! তার লেখা এখন পাঠাবেন না, কখন পাঠাবেন তাও বলবেন না অথচ সদালাপে অলরেডি প্রকাশিত একটি লেখা নামিয়ে নিতে হবে। ভাবখানা যেন সদালাপ সম্পাদক যা খুশী তাই করতে পারে, অলরেডি প্রকাশিত একটি লেখা নামিয়ে নিলে মোস্তফা কামাল তাকে প্রশ্ন করবেননা, কেন এমনটি করা হোল?
লেখা কখন পাঠাবো সে প্রসঙ্গ এলো কেন সেটাও আমি বুঝতে পারছি না। আমি কিন্তু উনাকে পরিষ্কার করেই বলেছিলাম যে, আমি সাদালাপে লেখাটা পাঠাইনি এবং পাঠাতে আগ্রহীও না। লেখক হিসাবে কোন লেখা কোথায় পাঠাবো কি পাঠাবো না সেটা নিশ্চয়ই আমার অধিকারের মধ্যেই পড়ে। নাকি পড়ে না? আর তাছাড়া কদর্য সমালোচনা ছাপা হওয়ার পর সেই সমালোচনাকে ডিফেন্ড করার জন্য আমাকে সেখানে লেখা পাঠাতে হবে এমন বাধ্যবাধকতাও নিশ্চয়ই আমার নেই।
সদালাপ সম্পাদক আমার অনুরোধকে আবদার বলে মনে করেছেন। আমি মোটেও আবদার করি নাই। অনুরোধ করেছিলাম মাত্র। মূল লেখাটি ছাড়া সমালোচনাটি ছাপানোতে লেখক হিসাবে আমার অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে, আমার সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সদালাপের পাঠকেরা একপেশে ধারণা পাচ্ছে। সেটারই প্রতিকার চেয়েছি শুধু আমি। আপনি আমার মামা নন সেটা আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমনই জানি। এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনি আমার মায়ের আপন ভাই হলেও অযৌক্তিক কোন আবদার আমি আপনার কাছে করতাম না। আমার লেখার সূত্র না দিয়ে আমাকে আক্রমন করা হয়েছিল বলেই আমি আপনাকে অনুরোধ করেছিলাম লেখাটি সরিয়ে নিতে। আমার ভিন্নমতে প্রকাশিত হওয়া কিছু লেখার ভিত্তিতে মোস্তফা কামাল সাহেব গালিগালাজ সমৃদ্ধ নোংরা সমালোচনামূলক একাধিক লেখা ভিন্নমতে পোষ্ট করেছেন। যেহেতু আমার লেখাগুলো ভিন্নমতে প্রকাশিত হয়েছে, কাজেই সেখানে সমালোচনা করাটা কামাল সাহেবের অধিকারের মধ্যেই পড়ে বলে আমি মনে করি। সমালোচনা সুরুচির হয়েছে না কুরুচির হয়েছে সেটা দেখাটা অবশ্য ভিন্নমত সম্পাদকের দায়িত্ব ছিল। কামাল সাহেবের সেই সমালোচনাগুলোর কোনটাকেই আমি ভিন্নমতের সম্পাদক বিপ্লব পালকে অনুরোধ করি নাই তার ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নিতে।
যে কোন পত্রিকার সম্পাদক খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল পদ। সে সম্পর্কে মোটামুটি স্বচ্ছ ধারণা আমার আছে বলেই আমি মনে করি। ইচ্ছা করলেই যা খুশি যে করা যায় না সে বিষয়েও আমি জ্ঞাত। কিন্তু অনৈতিক কোন কিছুকে ভুলবশত প্রকাশের পর 'অলরেডি প্রকাশিত' হয়ে গেছে বলে তা আর সরিয়ে নেওয়া যাবে না এমন কোন বাধ্যবাধকতা সম্পাদকদের আছে বলে আমার জানা নেই। আমান সাহেব মোস্তফা কামাল সাহেবের প্রশ্নের আশংকায় তার লেখাটা ওয়েবসাইট থেকে নামাবেন না। ভাল কথা। কিন্তু তিনি ভেবে দেখেননি যে, এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ পার্টি কিন্তু মোস্তফা কামাল সাহেব না। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমি। কামাল সাহেবের কর্মকান্ড যে নৈতিক ছিল না, সেটা আমান সাহেবের প্রদত্ত নোট থেকেই পরিষ্কার। কাজেই আমাকে নিয়ে বা আমার লেখাকে নিয়ে একটি অনৈতিক সমালোচনামূলক লেখা নামিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করে আমি নিশ্চয়ই মামা বাড়ীর অযৌক্তিক কোন আবদার করি নাই।
কি চমৎকার সব কথা! কি উদার মানসিকতা! কিন্তু মন মুক্ত করে ফেলাতে, কথায় ও কাজে মিল রাখার যে একটি সাধারণ দায়বদ্ধতা আছে সেটি থেকেও মনে হয় নিজেকে মুক্ত করে ফেলেছেন ফরিদ সাহেব। তার আর্টিকেলটি তিনি পাঠালেন না।
আমার উদার মানসিকতা নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছেন আমান সাহেব। তা তিনি করতেই পারেন। আমি উদার মানসিকতার কিনা সে বিষয়ে নিজে বলার কোন অর্থ হয় না। এটুকু শুধু বলতে পারি যে, যে কথাগুলো আমি লিখেছি সেগুলো আমি গভীর বিশ্বাস থেকে জেনে বুঝেই লিখেছি। অন্যেরা কি করে জানি না। তবে আমার ক্ষেত্রে আমার লেখার প্রতিটা শব্দ আমার আদর্শের অন্তর্মূল থেকে উৎসারিত এবং আমার বুকের গহীনতলে লুকিয়ে থাকা একরাশ স্বপ্নের ছোঁয়ায় তা সিক্ত। আমি বাস্তব জীবনে যা বিশ্বাস করি, মানুষকে নিয়ে যেভাবে স্বপ্ন দেখি তার শতভাগ প্রতিনিধিত্ব করে আমার লেখাগুলো। কিন্তু আমি যে কথাগুলো লিখেছি সেগুলো যে উনার বিশ্বাস হয়নি সেটা বোঝা যাচ্ছে বেশ ভালভাবেই। তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই। উনার অবিশ্বাস থাকতেই পারে। তবে আমি কথা এবং কাজে মিল রাখার সাধারণ দায়বদ্ধতা থেকে নিজেকে মুক্ত করে ফেলেছি এমন ভাবনা আমান সাহেবের মনে কি করে এলোই সেটাই আমার চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উনার সংগে আমার একটা বিষয়েই কথা এবং কাজের সমন্বের দায়িত্বের মুখে পড়তে হয়েছে। আমি কিন্তু একবারো উনাকে বলি নাই যে আমি আর্টিকেলটা সদালাপে পাঠাবো। উনিই বরং আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। তাও সেটা আমি উনাকে জানানোর পরে যে আমার লেখাটা আমি উনাদের ওয়েবসাইটে পাঠাইনি। তারপরও সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি যে লেখাটা পাঠাতে আগ্রহী না সেটাও উনাকে স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়ে দিয়েছি। কাজেই আর্টিকেলটা না পাঠানোতে কি করে কথা এবং কাজে মিল রাখার দায়বদ্ধতা থেকে আমি মুক্ত হলাম সেটা বুঝতে পারলাম না ভাল করে। আমারতো বরং মনে হচ্ছে যে, ‘মন মুক্ত করার পরেও’ কথা এবং কাজের মিল রাখার দায়বদ্ধতাটুকু আমি সঠিক পরিমাণেই প্রদর্শন করেছি।
তবুও সদালাপে মোস্তফা কামালের আর্টিকেলের নীচে আমরা নোট দিলাম। তিনি এই নোটের ভিতরে এখন প্রায় বছর দেড়েক পরে সুক্ষ চালাকি খুজে পেলেন কারন সম্পাদক নাকি বলেছেন ‘আমরা জানতাম না যে মূল লেখাটি সদালাপে ছাপা হয় নাই…'। সদালাপ সম্পাদকের মুখে তার মন গড়া কথা গুজে দিয়ে তাকে কিছুটা ব্যাঙ্গও করেছেন।
নোট দেওয়ার জন্য আগেও ধন্যবাদ দিয়েছি। আবারো দিলাম। কিছুটা ব্যঙ্গ করেছি সেটাও স্বীকার করছি। এ জন্য আমান সাহেব হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছেন। সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু কোন মনগড়া কথা আমি আমান সাহেবের মুখে যে গুঁজে দেইনি সেটা পাঠকেরা আমাদের আদান প্রদানকৃত ইমেইলগুলো এবং আমান সাহেবের নোট দেখলেই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।
তবে নোটটি দেয়ার জন্য তিনি সম্পাদককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মন মুক্ত হলেও সব সদগুণ এখনো যায়নি দেখছি।
সাধারণত অশিক্ষিত এবং অন্ধ ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে এ ধরনের ধারণা থাকে যে, কোন মানুষ প্রচলিত কোন ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী না হলেই তার মধ্য থেকে সমস্ত নৈতিকতা উধাও হয়ে যায়। চরম ধরনের ভ্রান্তিবিলাস এবং তীব্র অহংবোধ থেকেই শুধুমাত্র মানুষের মনে এই ধরনের অলীক ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হয়। নৈতিকতাকে ধর্মবিশ্বাসীরা তাদের একচেটিয়া অধিকার বলে মনে করে থাকেন। নৈতিকতা বা সদগুণের সাথে যে ধর্মবিশ্বাসের কোন সম্পর্ক নেই সেটা তারা মেনে নিতে পারেন না কিছুতেই। আমান সাহেবের মত উদার একজন মানুষও শুধুমাত্র রাগান্বিত হওয়ার কারণে সেই পর্যায়ে চলে যাবেন সেটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি উনাকে ধন্যবাদ দেওয়াতে উনি রীতিমত বিস্মিত হয়েছেন এবং বিস্ময়ের চোটে বলেই ফেলেছেন যে, দেখা যাচ্ছে যে মন মুক্ত হলেও আমার মধ্য থেকে সব সদগুণ এখনো বিলোপ হয়নি। মনে হচ্ছে উনি বিশ্বাস করেন যে, মন মুক্ত হলেই মানুষের সব সদ্গুণ তার ভেতর থেকে উবে যায়। ফলে আমার মধ্য থেকেও সব সদগুণ উড়ে চলে গেছে। আমি নিজেকে খুব একটা ভাল মানুষ বলে দাবি করি না কখনো। আবার সব সদগুণ রহিত ভয়াবহ খারাপ প্রকৃতির লোক বলতে যা বোঝায় সেটাও আমি নই। দোষে গুণে মিলিয়েই অতি সাদামাটা খুব সাধারণ একজন মানুষ আমি। কোন কাঠমোল্লা বা অশিক্ষিত লোকের কাছ থেকে এ’ধরনের কথা শুনলে হয়তো তেমন একটা অবাক হতাম না আমি। স্বাভাবিক বলেই মেনে নিতাম। কিন্তু আমান সাহেবের মত একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি এরকম পূর্বসংস্কারাচ্ছন্ন (prejudiced) মনোভাবের অধিকারী হবেন সেটা মেনে নেওয়াটা বড্ড কঠিন আমার জন্য।
সদালাপে আমরা কন্সট্রাক্টিভ ক্রিটিসিজমকে স্বাগত জানাই। আমরা যদি কোন ভুল করি, অন্যায় করি, পার্শিয়ালিটি করি, অবশ্যই আমাদের বিরুদ্ধে লিখবেন। তবে সদালাপের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কিছু লিখতে হলে অনুরোধ করবো উপযুক্ত প্রমান বা রেফারেঞ্চ দিতে। স্মৃতিনির্ভর তথ্যের উপর ভিত্তি করে, বিদ্দেষপ্রসূতভাবে সদালাপকে ত্যক্ত না করে অন্য কাজে মন দিলে ফরিদ সাহেবের শ্রম ও সময় উপযুক্ত উপযোগিতা পাবে বলে মনে হয়।
সদালাপ যে গঠনমুলক সমালোচনা (কন্সট্রাকটিভ ক্রিটিসিজম) কে স্বাগত জানায় সে বিষয়ে অন্য যে কারো সন্দেহ থাকলেও আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহই নেই । সদালাপের প্রতি ব্যক্তিগত কোন বিদ্বেষও নেই আমার। সেধে সেধে ত্যক্ত করার তো কোন প্রশ্নই আসে না। বরং গভীর আগ্রহ নিয়ে আমি প্রায় প্রতিদিনই সদালাপে একবার করে ঢু মেরে দেখি নতুন কি লেখা এসেছে সেখানে। আপনি বরং গত দুই এক বছরের সদালাপ এবং মুক্তমনাকে তুলনা করে দেখুন। সদালাপে কতবার মুক্তমনা বিষয়ে সমালোচনা এসেছে আর মুক্তমনায় কতবার সদালাপকে নিয়ে আমরা সমালোচনা মেতেছি সেটা যারা এ’দুটো ওয়েবসাইটে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা তা খুব ভাল করেই জানেন।
আমার লেখাটি যে স্মৃতি নির্ভর তথ্যের উপর ভিত্তি করে নয় সেটা প্রমাণ করার কোন প্রয়োজনও দেখছি না আমি। আমান সাহেবের লেখার প্রতিটি ছত্রে ছত্রেই সেই প্রমাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যে সকল তথ্য প্রমাণ হাতে রেখেই আমি আমার লেখাটি লিখেছিলাম তার মোটামুটি সবগুলোই আমান সাহেব তার প্রতিক্রিয়ায় পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। আমার লেখাটি কি স্মৃতি নির্ভর না তথ্য নির্ভর সে বিষয়ে আমাকে নতুন করে প্রমাণ দিতে হবে না বলেই মনে করছি আমি।
আন্তর্জালে আমরা যারা লেখালেখি করি তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই ব্যক্তিগত দেখা সাক্ষাৎ হয়নি বললেই চলে। কাজেই ব্যক্তিগত রেষারেষির কোন জায়গা এখানে আছে বলে আমি মনে করি না। সদালাপ বা আমান সাহেবের সাথেও আমার ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই। একই শহরে থাকলে আমরা দু'জন পরস্পরের ভাল বন্ধু হওয়াটাও বিচিত্র কিছু ছিল না। আমি লেখালেখি করি কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে উদ্দেশ্য করে এবং নিজের মনের আনন্দের জন্য। একে ওকে যত্রতত্র বিনা কারণে আক্রমন করার কোন ইচ্ছা, অভিপ্রায় বা আগ্রহ কোনটাই আমার নেই। আমার ‘বাসভূমির চৌর্যবৃত্তি’র লেখাটি আমি লিখেছিলাম আন্তর্জালের বল্গাহীন অবাধ স্বাধীনতার নামে যে অনৈতিক কাজ চলে সে সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত বা দুঃখ দেওয়ার জন্য নয়। আমার ওই লেখার কারণে সদালাপের সম্পাদক আমান সাহেব সহ আর কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আন্তর্জালে চৌর্যবৃত্তির মত নিন্দনীয় কাজ বন্ধ হলেই আমি খুশি। এর চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা আমার নেই।
আমি আশা করবো আমান সাহেবের মত এরকম গুণী এবং উদার মনের মানুষ যেহেতু মুক্তমনায় একবার পদধূলি দিয়েই ফেলেছেন, এখন থেকে তিনি নিয়মিত আমাদের মুক্তমনায় লেখালেখি করে আমাদেরকে ধন্য করবেন। মুক্তমনার পাঠকেরা উনার জ্ঞানগর্ভ লেখা থেকে অশেষ উপকৃত হবেন সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই।
পরিশেষে, আমি আন্তরিকভাবে সদালাপের সাফল্য কামনা করছি। সদালাপের সম্পাদক, সকল লেখক এবং পাঠকদের প্রতি রইলো আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
ভালো থাকবেন সবাই।
মায়ামি, ফ্লোরিডা farid300@gmail.com
===============================================
মুক্তমনার মডারেটর, 'মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক।