বুদ্ধিমত্তার ক্রমবিকাশ
দিগন্ত সরকারবুদ্ধি কি?
বুদ্ধিমত্তার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমে বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা নিরূপণ করতে হয়। বুদ্ধি কি? অধিকাংশ মানুষের মতে সমস্যার সঠিক সমাধান করাই বুদ্ধিমত্তার আসল পরিচয়।তবে বারট্রান্ড রাসেলের মতে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিও বুদ্ধি যাচাই করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ – বারবার প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান করা আর সমস্যার গভীরে গিয়ে মৌলিক সমাধান করার মধ্যে পার্থক্য অনেক। বুদ্ধিমত্তার আরেকটা নিদর্শন পাওয়া যায় দূরদর্শিতার মধ্যে। নিউরোলজিস্ট হোয়ার্স বার্লোর মতে, আপাতদৃষ্টিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু ঘটনার মধ্যে নির্দিষ্ট সূত্র খুঁজে বের করার মধ্যেই বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ। আলোচনায় যুক্তিপূর্ণ মতামত জ্ঞাপন, নিখুঁত তুলনা খুঁজে বের করা, ভবিষ্যতবাচ্যতা বা অনুমান করা যা এরপরে কি উত্তর পেতে চলেছে – এ সবই বুদ্ধির বহিঃপ্রকাশ। বাস্তবে, বুদ্ধিমত্তার সর্বজনীন সংজ্ঞা হয়ত সম্ভব নয়, যেমন চেতনাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।
যেকোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হল সে একাধারে একাধিক মতামত নিয়ে চিন্তা করতে পারে, এবং সে দ্রুত প্রত্যেকটি মতামতে অনেকগুলো দিক ভাবতে পারে। বহুমুখী প্রতিভাও বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন। খাবার ব্যাপারে জীবজগতে অধিকাংশই একমুখী, কিন্তু সর্বভুক প্রাণীরা সবসময়েই সুবিধা পেয়ে আসে। যেমন প্রকৃতি পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষমতা সর্বভুক প্রাণীদেরই বেশি, তাই বরফ যুগে (ice age) যখন খাবারের অভাব দেখা দিয়েছিল, তখন সর্বভুক প্রাণীরা বিশেষ অসুবিধা ছাড়াই বেঁচে থাকতে পেরেছিল।
বুদ্ধিমান জীবজগৎ
জীবজগতের মধ্যে অনেক বিস্ময়কর কার্যকারিতা দেখা যায় যা তাদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আপাত ধারণা তৈরি করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় কোনো প্রোটিন, উৎসেচক বা হরমোন নিয়ন্ত্রিত। খুব সহজেই তাদের বোকা বানানো সম্ভব। কাঠবেড়ালি শীত পড়ার আগেই খাবারদাবার সঞ্চয় করে রাখে। কাঠবেড়ালির ক্ষেত্রে মেলাটোমিন নামে এক হরমোন রাতে ক্ষরিত হয়, তাই রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে সেই হরমোনের প্রভাবে তারা বুঝে নেয় যে শীত আসন্ন। তাই, পরিকল্পনার নিদর্শন হলেও এটা কাঠবেড়ালির বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়।
পরিকল্পনা বুদ্ধিমত্তার এক অন্যতম নিদর্শন। আর এই পরিকল্পনা যত দূরদর্শী, জীব তত বেশী বুদ্ধিমান। ধাপে ধাপে পরিকল্পনা করার ক্ষমতা তাই জীবজগতে শুধুমাত্র উন্নততর প্রাণীদের মধ্যেই দেখা যায়। ধরা যাক একটা শিম্পাঞ্জী বনে এক জায়গায় খাবারের সন্ধান পেল। সে তখন অন্য কোনো জায়গায় সরে গিয়ে চিৎকার করে তার সঙ্গীদের ডাকবে। অন্য শিম্পাঞ্জীরা যতক্ষণে ভুল গন্তব্যে পৌঁছবে, ততক্ষণে সে খাবার নিয়ে সটকে পড়বে, অন্যেদের ভাগ না দিয়েই। সন্দেহ নেই, পরবর্তী কয়েকটি ধাপে চিন্তা করার ক্ষমতার জন্যেই শিম্পাঞ্জীরা এরকম পরিকল্পনা করতে সক্ষম।
ভাল করে ভেবে দেখলে বোঝা যায় যে উপরোক্ত ক্ষেত্রে একই কাজ বারবার করতে থাকলে বাকিরা তো বুঝে যাবে, তাহলে এটা কিভাবে বুদ্ধিমত্তা বলা যায়? তাই আসল বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় অনন্য পরিস্থিতিতে – যে অবস্থায় জীব আগে কখনও আসে নি। আর এখানেই মানুষের জয়জয়কার। উপরোক্ত ক্ষেত্রে মানুষ যদি তার সঙ্গীদের এভাবে ধোঁকা দিত, তাহলে প্রতারক মানুষটিকে বারবার নতুন নতুন পন্থার সাহায্য নিতে হবে – উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে। এই উদ্ভাবনী ক্ষমতাই মানুষের সাথে অন্যেদের তফাৎ গড়ে দেয়।
জীবজগতে বুদ্ধির আরেক নিদর্শন পাওয়া যায় নকল করার ক্ষমতার মধ্যে। এই ক্ষমতা বিশেষত দেখা যায় কুকুর আর বানরের মধ্যে। কুকুর আসলে সামাজিক জীব, মানুষের শারীরিক ভাষা (body language) থেকে বুঝে নেয় হাবভাব। তাই, খবরের কাগজের দিকে তাকিয়ে খবর পড়ার মত করে কুকুরকে বল আনতে বললে কুকুর বল আনার প্রচেষ্টাও দেখাবে না। কুকুরের স্বাধীন ভাবে বোঝার ক্ষমতা খুবই সীমিত, তাই একটা কুকুরকে তালিম দিয়ে দশ-বারোটা বিভিন্ন কাজ করানো খুবই শক্ত কাজ।
মানুষের বুদ্ধিমত্তার অন্যতম প্রমাণ হল ভাষার ব্যবহার – ধ্বনি বা শব্দ থেকে নির্দিষ্ট ব্যাকরণ সম্মত ভাবে বাক্য গঠন করা। জীবজগতে অনেক প্রাণীও বিভিন্ন ধ্বনি ব্যবহার করে, কিন্তু ব্যাকরণ ব্যবহার করার নিদর্শন অনন্য। শিম্পাঞ্জীরা প্রায় বারো ধরণের ধ্বনি ব্যবহার করে তথ্য আদানপ্রদানের জন্য – প্রতিটি ধ্বনি আবার বিভিন্ন প্রাবল্যে উচ্চারণ করে তাদের অনুভূতিও জানিয়ে দেয়। মানুষও মাত্র ত্রিশ-চল্লিশটি বিভিন্ন মৌলিক ধ্বনি ব্যবহার করেই ভাষা গঠন করেছে। কিন্তু মানুষ একই ধ্বনি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করতে পারে, এভাবেই সে তার ভাষার পরিধি বিস্তৃত করেছে। একই ধ্বনি দুটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থ বহন করে বা পরের পর এরকম ধ্বনি বা শব্দ জুড়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাব প্রকাশের নিদর্শন শিম্পাঞ্জীর মধ্যে নেই, যা আছে মৌমাছিদের মধ্যে।
একই ইঙ্গিত যে বিভিন্ন অর্থবহ হতে পারে, তা জীবজগতে মৌমাছিদের মধ্যে দেখা যায়। কিছু মৌমাছি যখন খাবার খুঁজে পায়, তারা তাদের মৌচাকে ফিরে এক অদ্ভূত নৃত্যে যোগদান করে। তারা লেজ ও পাখা শৃঙ্খলাবদ্ধ করে শেকলের (পরপর কয়েকটি বাংলা সংখ্যা ‘৪’-এর মত শেকল) মত আকার ধারণ করে। সেই শেকলের নির্দিষ্ট কোণ বলে দেয় খাবারের উৎস কোন অভিমুখে, আর শেকলের বলয়ের সংখ্যা নির্ধারিত হয় দূরত্ব অনুসারে। সাধারণভাবে দেখা গেছে, জার্মান মৌমাছিরা তিনটি বলয়ের মাধ্যমে ১৫০ মিটার বোঝায় আর ইটালিয়ান মৌমাছিরা বোঝায় ৬০ মিটার। কিন্তু ভাষাতত্ত্ববিদেরা একে আলাদা গুরুত্ব দিতে নারাজ। আসলে, মৌমাছিদের বেঁচে থাকার একটি অভিন্ন অঙ্গ হল তাদের এই খাদ্যসংগ্রহের প্রক্রিয়া। তাদের অনন্য প্রক্রিয়া তাদের প্রাকৃতিক নির্বাচনে অন্য জীবের তুলনায় সুবিধা প্রদান করে, তাই জিনগত ভাবে এই প্রক্রিয়া এখন তাদের বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। কিন্তু একই ঘটনা মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় – মানুষ ভাষা ব্যবহার করে যেকোনো কাজে, যেকোনো অনুভূতিতে – যা তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করতেও পারে, নাও পারে।
মস্তিষ্ক
আমাদের এই বুদ্ধির রহস্য কি? বিজ্ঞানীদের মতে – আমাদের মস্তিষ্ক। আরো সঠিক ভাবে বলতে গেলে – আমাদের সেরিব্রাল করটেক্স। ভাঁজ হয়ে থাকা আমাদের সেরিব্রাল করটেক্স চারটে A4 সাইজের পেপারের সমান আকার নিতে পারে। শিম্পাঞ্জীর ক্ষেত্রে এই আকার একটি সাইজের পেপারের মত, বানরের ক্ষেত্রে একটা পোস্টকার্ডের আকার আর ইঁদুরের ক্ষেত্রে এটার আকার মাত্র একটা স্ট্যাম্পের সমান। মস্তিষ্কের অনন্য বৈশিষ্ট্যই মানুষকে জীবজগতের চালকের আসনে বসিয়েছে – নিয়ে গেছে আন্টার্কটিকা থেকে হিমালয়ের চূড়ায়। কিভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হল এই মস্তিষ্ক। কিভাবেই বা শিশুর সাধারণ বুদ্ধিমত্তা প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে বিকশিত হয়ে পরিণতি লাভ করে?
সুতরাং একটা বিষয়ে একমত হওয়া যেতে পারে যে বুদ্ধির ক্রমবিকাশ একরকম মস্তিষ্কের ক্রমবিকাশের মাধ্যমেই ঘটেছে। আর মস্তিষ্ক হল স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল। তাই স্নায়ুতন্ত্র থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে বিবর্তনের পথে মস্তিষ্ক গঠিত হয়েছে। অন্যভাবে ভাবলে বলা যায়, আমাদের বুদ্ধি আমাদের বহির্জগতের সাথে তথ্য আদান-প্রদানে সাহায্য করে। তথ্য আমরা বহির্প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করি, প্রক্রিয়াকরণ করি আর শেষে আমাদের আচরণের মাধ্যমে তা প্রতিফলিত হয়। স্নায়ুতন্ত্রের কাজ হল এই সব প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা।
স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিবর্তন
আদিমতম প্রাণী থেকে আরম্ভ করে মানবপ্রজাতি পর্যন্ত বিবর্তনের ইতিহাসে অন্যতম এক ভূমিকা নিয়েছে এই স্নায়ুতন্ত্র। বিবর্তনের মূলনীতি যদি ভেবে দেখা যায় – যে বৈশিষ্ট্য বাঁচার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, তাই পরবর্তীকালে ভিন্ন প্রজাতির উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্নায়ুতন্ত্রের বিবর্তনের ক্ষেত্রে যে মূলনীতি কাজ করে, তা হল – “ভালর কাছে যাওয়া আর খারাপ থেকে দূরে থাকা”। বিবর্তনের পথে, ভাল বলতে বোঝায় যা কিছু বাঁচার বা বংশবিস্তারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে – যেমন খাদ্যসংগ্রহ, প্রজননের স্থান নির্ণয় বা শিকার করা। আর খারাপ থেকে দূরে থাকা হল ক্ষতিকর রাসায়নিক বা শিকারীর নজর এড়িয়ে যাওয়া।
যদি এককোষী প্রাণীর কথা ভাবা যায়, তারা ক্রমাগত কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসতে থাকে - কিছু ভাল (খাদ্য) আবার কিছু ক্ষতিকর। স্বাভাবিকভাবেই, সঠিক রাসায়নিক চিনে নেবার আংশিক ক্ষমতাও এধরনের কোষকে বিবর্তনের পথে বেশী সুবিধা প্রদান করে। একটি উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি গোলাকার এককোষী প্রাণী কোনো এক পার্শ্বে ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে যদি শরীরে কোনো রাসায়নিক উৎপাদনের মাধ্যমে সংকুচিত হয়ে উপবৃত্তাকার ধারণ করতে পারে, তার সেই প্রতিক্রিয়া তাকে বিবর্তনের ক্ষেত্রে সুবিধা দেবে। জীবজগতে এরকম এককোষী প্রাণী প্রচুর দেখা যায়।
এবার আসা যাক বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে। বহুকোষী জীবকে অনেকগুলো এককোষী জীবের সমষ্টি বলে গণ্য করা যায়। এদের মধ্যেও একইরকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। জেলিফিসের বহির্ত্বকে অবস্থিত কিছু কোষ স্পর্শ বা আলোর উপস্থিতি অনুভব করতে পারে। প্রাথমিকভাবে বহুকোষী জীবে অনুভূতি পরিবাহিত হয় আন্তর্কোষীয় রাসায়নিক বিনিময়ের মাধ্যমে। খুব স্বাভাবিকভাবেই, যে কোষগুলো দীর্ঘতর, তারা এ কাজে বেশী পারদর্শী ছিল। তাই মানুষের স্নায়ুকোষ যে সবচেয়ে লম্বা কোষ, এটা কোনো অঘটন নয়।
সাধারণভাবে, যে যে জীববৈশিষ্ট্য জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তারা সবই বিবর্তনের পথে জীবের এক একটি অঙ্গের বিশিষ্ট কাজ হয়ে দাঁড়ায়। স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না। তাই, উন্নততর কীটপতঙ্গের স্নায়ুতন্ত্র কেন্দ্রীভূত হয়ে একটি মস্তিষ্ক গঠিত হয়। কেন্দ্রীয়করণের সুবিধা খুবই সুস্পষ্ট। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা অনুভূতির একত্রে প্রক্রিয়াকরণ সম্ভবপর হয়। যেমন, কান থেকে আসা শব্দ আর চোখ থেকে আসা দর্শন অনুভূতি একত্রে কেন্দ্রীভূত হলে তাদের সহজে প্রক্রিয়াকরণ বা অনুধাবন করা যায়। কীটপতঙ্গের ক্ষমতা একারণে পূর্ববর্তী জীবের থেকে অনেকটাই উন্নত – বিষ দিয়ে শিকার ধরা, সাঁতার কাটা, বা মৌমাছির নৃত্য এই সাধারণ মস্তিষ্ক দ্বারা পরিচালিত হয়।
মেরুদন্ডীদের ক্ষেত্রে এই স্নায়ুতন্ত্রের মূল পথটি মেরুদন্ড দিয়ে সুরক্ষিত। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভূতি বয়ে আনে আর প্রতিক্রিয়া ফিরিয়ে দেওয়ার এক হাইওয়ের মত কাজ করে সুষুম্নাকান্ড। সুষুম্নাকান্ডের মত স্নায়ুতন্ত্রে, এমনকি মস্তিষ্কেও আলাদা আলাদা বিশিষ্ট অংশে একেকটি কাজ করার প্রবণতা দেখা দেয়। যেমন, চোখের জন্য একধরণের স্নায়ুতন্ত্র ও তাকে প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি মস্তিষ্কের বিশেষ অংশ কাজ করে। এর সুবিধা হল এরকম একটি জটিল গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের যাতে একটি অংশ খারাপ হয়ে গেলেও অন্যগুলো কাজ চালিয়ে যেতে পারে – আর এই সুবিধার ফলে বিবর্তনের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্য উন্নততর জীবের মধ্যে প্রতিয়মান হয়।
মস্তিষ্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তন হল স্মৃতি। আগেই বলেছি ভাল থেকে খারাপকে আলাদা করার কাজে সমগ্র স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা আছে। এই কাজে যদি আগের অভিজ্ঞতার সাহায্য পাওয়া যায় তাহলে সুবিধা বেশি – তাই যে অংশ এই কাজে পারদর্শী, তাও নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজাতির বৈশিষ্ট্য হয়ে যায়। যেমন, আগে কোনো খাবার খারাপ বলে নির্বাচিত হয়ে থাকলে, পূর্ব-অভিজ্ঞতার কারণে জীব সেই ফল আবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে। এজন্যে মস্তিষ্কের অবস্থা (state) পরিবর্তিত হতে হবে। এই বৈশিষ্ট্যকে বলে স্থিতিস্থাপকতা।
সবশেষে বলা যায়, মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষের সংখ্যা বা আকার বেড়ে চলেছে যাতে আরো জটিলতর সমস্যার সমাধানে আরো বেশী তথ্য চলাচল করতে পারে আর মস্তিষ্কও আরো পারদর্শী হতে পারে।
মস্তিষ্কের বিবর্তনের ধারা
তাহলে ভাল আর খারাপের বিভেদ বোঝার জন্য যে সিস্টেমের উদ্ভব, তাই ক্রমে চতুর্মুখীভাবে বিবর্তিত হয়ে মস্তিষ্ক গঠিত হয়। এই চারটি বিবর্তনের অভিমুখ হল – কেন্দ্রীয়করণ (Centralization or Cephalization), অংশীয়করণ বা এককীকরণ (modularization), স্থিতিস্থাপকতা (Plasticity) আর স্নায়ুকোষের সংখ্যা বৃদ্ধি।
জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম কেলভিনের মতে, বরফ যুগের তাপমাত্রার আকস্মিক হ্রাস মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা একেবারে অনেকটা বৃদ্ধি করেছিল – কারণ আকস্মিক পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মস্তিষ্কই ছিল তার একমাত্র হাতিয়ার। তার মতে একসময়, মস্তিষ্কের একেকটি অংশ একাধিক কাজ করত। ধীরে ধীরে কোনো কোনো কাজ যত মানুষকে প্রকৃতিতে সুবিধা দিয়েছে, তত তা বিশিষ্ট অংশের কার্যকারিতায় পরিণত হয়েছে। যেমন, মস্তিষ্কের ভাষাকেন্দ্র আসলে চলন ও গমনে সাহায্যকারী কেন্দ্রের বিবর্তিত রূপ। বিবর্তনের এই ধারা সম্পর্কে মস্তিষ্কের বিবর্তন নিয়ে জীববিজ্ঞানী স্টেফান গাল্ডের ব্যবহৃত পরিভাষা খুবই জনপ্রিয় – এক্সাপটেশন (Exaptation)। জীবজগতের অধিকাংশ জটিল বৈশিষ্ট্য এভাবেই ধাপে ধাপে ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মাধ্যমে এবং একই অঙ্গের একাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়। মস্তিষ্ক তারই একটি আদর্শ উদাহরণ।
জীবদ্দশায় বিবর্তন
মস্তিষ্ক কিভাবে প্রজাতিভেদে সরল থেকে জটিল ও জটিলতর আকার ধারণ করল, তা বোঝা গেল। কিন্তু মস্তিষ্কের বিবর্তনের আরো একটি মাত্রা আছে। একই জীবের জীবদ্দশায় শিশুবয়স থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স অবধি তার মস্তিষ্ক একইরকম থাকে না – পরিবর্তিত হয়। কিভাবে আপাত সরল শিশুমস্তিষ্ক পরিণত হয় প্রাপ্তবয়স্কের জটিল মস্তিষ্কে, তা বিবর্তনের অন্য এক মাত্রা।
নিউরোন ও সাইন্যাপস
মানবমস্তিষ্কের মূল গঠন-উপাদান হল নিউরোন। মস্তিষ্কে প্রায় ১১ বিলিয়ন স্নায়ুকোষ বা নিউরোন থাকে। এই কোষগুলো বৈদ্যুতিক সঙ্কেতের আকারে অনুভূতি পরিবহন করতে পারে। এদের দুই প্রান্তে যে শাখাপ্রশাখার মত প্রবর্ধক থাকে তারা হল ডেন্ড্রাইট, আর মূল তন্তুর মত অংশের নাম অ্যাক্সন। ডেন্ড্রাইট হল সঙ্কেতগ্রাহক অ্যান্টেনার মত, যা অন্য নিউরোন থেকে সঙ্কেত গ্রহণ করে। অ্যাক্সন সেই সঙ্কেত পরিবহন করে অপরপ্রান্তের ডেন্ড্রাইটে নিয়ে যায়। দুটি বা ততোধিক নিউরোনের সংযোগস্থলকে বলে সাইন্যাপ্স, যেখানে এদের সঙ্কেত বিনিময় হয়। মানুষের করটেক্সে মোটামুটি ১০,০০০ এর মত সাইন্যাপ্স থাকে। সাইন্যাপসের ‘ওয়ারিং’-এর মাধ্যমেই আমাদের মস্তিষ্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠে।
মস্তিষ্ক ও জিন
অনেককাল আগে মস্তিষ্ককে একটি অপরিবর্তনশীল অঙ্গ বলে মনে করা হত। প্রথম সেই ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটান রজার স্পেরি। পঞ্চাশের দশকে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন মস্তিষ্ক গঠনে বংশগতির বাহক জিনের ভূমিকা আছে। মাছের চোখের সাথে মস্তিষ্কের চক্ষুকেন্দ্র সংযোগকারী স্নায়ু-তন্তুগুলোকে মস্তিষ্কের অন্য জায়গায় জুড়ে দিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা গেল নিজে থেকেই কিছু তন্তু গজিয়ে আবার চক্ষুকেন্দ্রের সাথে সংযোগ সাধন করে ফেলেছে। একই পরীক্ষা ইঁদুরের ওপরেও করে দেখা গেল, যে স্নায়ু-তন্তুগুলো যেন আগে থেকেই জানে কোন পেশীতে তারা আবদ্ধ থাকবে, অন্য জায়গার সরিয়ে দিলেও তারা আগের জায়গার সাথে সংযুক্তির প্রচেষ্টা করে। তিনি এ থেকে ধারণা করেন যে শরীরে স্নায়ু-তন্তুর সংযুক্তি জীবের জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মস্তিষ্কের আরো বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করার জন্য তিনি ১৯৮১ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
কিন্তু এই ধারণার মধ্যে কিছু গোলমাল ছিল। জিন আবিষ্কারের পর দেখা গেল সাড়ে তিন বিলিয়ন একক তথ্য রাখার ক্ষমতা আছে, যেখানে মস্তিষ্কে স্নায়ু-সংযুক্তি বা সাইন্যাপসের সংখ্যা এক হাজার মিলিয়ন মিলিয়ন (একের পিঠে ১৫টি শূন্য)। কি করে তাহলে জিনের মধ্যে সমস্ত সাইন্যাপসের অবস্থানগত তথ্য সঞ্চিত থাকা সম্ভব?
প্রশ্নটি ভালভাবে বুঝতে গেলে জীবজগতের একটি উদাহরণ দেখা যেতে পারে। Daphnia Magna বলে একধরণের মাছ, অযৌন জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করতে পারে – উৎপন্ন অপত্য ক্লোনের মত মায়ের সম্পূর্ণ জিনগত বৈশিষ্ট্য লাভ করে। এরকম কিছু অপত্যের মধ্যে দেখা গেল, তাদের নিউরোনের সংখ্যা সমান হলেও সাইন্যাপসের অবস্থান ও জটিলতা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। তাহলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ, যে সাইন্যাপস গঠনে জিনের ভূমিকা নেই, থাকলেও নগন্য।
এখন প্রশ্ন হল যদি জিনের মধ্যেই সংযোগের জন্য কোনো তথ্য না থাকে, তাহলে কিভাবে নিউরোনগুলো ঠিকঠাক চিনে ঠিক জায়গায় লেগে থাকছে? একটা বিড়ালের দুটো চোখ থেকে আসা নিউরোনগুলো মস্তিষ্কের পাশাপাশি অংশে কি ভাবে লেগে যায়? সূত্র খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের নজর গেল অনেক আগে প্রকাশিত কিছু তথ্যের ওপর। ১৯০৬ সালে ভিক্টর হামবার্গার দেখেছিলেন যে, মুরগীর ভ্রূণের সুষুম্নাকান্ডের একটি বিশেষ অংশে যেখানে ২০,০০০ নিউরোন থাকে, সেখানে একই জায়গায় প্রাপ্তবয়স্ক মুরগীর থাকে ১২,০০০ নিউরোন। শুধু তাই নয়, দেখা গেল, নিউরোন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে একটি অঞ্চলের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। আর এই বৃদ্ধি ওই অঞ্চলে উপস্থিত কোন রাসায়নিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিউরোনের বৃদ্ধি ঘটে রাসায়নিক দ্বারা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।
কিন্তু এরকম র্যান্ডমভাবে বেড়ে ওঠা নিউরোনের শাখাপ্রশাখা ও সংযুক্তির সংখ্যা অনেক বেশি হবার কথা। সেই সংযুক্তির সংখ্যা ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্ক জীবের মধ্যে কমে আসবে। যেমন ধরা যাক বিড়ালটার কথা। তার জন্মাবস্থায় দুটো চোখের নিউরোনই একই জায়গায় লেগে থাকে। কিন্তু বাঁ চোখ থেকে আসা তন্তু থেকে আসা সংকেত মস্তিষ্কের যে অংশে প্রক্রিয়াকরণ হয়, সেই অংশ ছাড়া আর সমস্ত অংশের সাথে সংযুক্তি আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে জন্য প্রাপ্তবয়স্ক বেড়ালের চোখে সঠিকভাবে বিভিন্ন অংশের স্নায়ু-তন্তু ঠিক ঠিক পেশী বা অংশে সংযুক্ত থাকে।
এবার প্রশ্ন হল, কিভাবে শরীর নির্ণয় করে কোন কোন সংযুক্তি দরকার আর কোনটি দরকার নেই? উত্তর জানা গেল ডেভিড হুবেল আর টরস্টেন ওয়েসেলের পরীক্ষায়। তারা সদ্যোজাত একটি বিড়ালের একটি চোখ কোনরকম ক্ষতিগ্রস্ত না করে আবরণ দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। এক সপ্তাহ পরে, বিড়ালটির দুটো চোখের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেল। যে চোখটি বন্ধ ছিল, তার তুলনায় খোলা চোখের সাথে মস্তিষ্কের সংযুক্তি অনেক ভালভাবে ঘটেছে, তুলনায় বন্ধ চোখের সংযুক্তির সংখ্যা অনেক কম। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – এই নিউরোনগুলো মস্তিষ্কে সংযুক্তির জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যে যত বেশী অনুভূতি বহন করে, প্রতিযোগিতায় তার জেতার সম্ভাবনাও বেশি।এই কারণেই, কারোর শিশুবয়সে চোখ খারাপ হয়ে গেলে, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাবার পরে তার চোখের অপারেশন করেও দৃষ্টি ফিরে পাওয়া শক্ত – ততদিনে তার চোখ-মস্তিষ্ক সংযোগকারী স্নায়ুতন্তু বিলুপ্ত হয়েছে। হুবেল আর ওয়েসেল মস্তিষ্কবিজ্ঞানে অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে স্পেরির সাথে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
তাহলে বোঝা গেল, যে আমাদের মস্তিষ্ক সহ স্নায়ুতন্ত্র জিন ও পরিবেশের প্রভাবে গঠিত হয়। জিন যেমন সামগ্রিক কাঠামো তৈরীতে ভূমিকা পালন করে, তেমনই নিউরোনগুলোর সংযুক্তি নির্ভর করে পরিবেশ থেকে আসা সংকেতের ওপরে। তাই, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় তার মস্তিষ্কের ক্ষমতা জিন এবং পরিবেশ – দুয়ের ওপরেই নির্ভর করে।
সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সদ্যোজাত জীবের মস্তিষ্কে প্রয়োজনের প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যায় নিউরোন থাকে – আর জন্মানোর পরে ধীরে ধীরে সংকেতের রকমফেরে ‘অতিরিক্ত’ নিউরোনগুলো ‘এলিমিনেট’ (eliminate) হতে থাকে। ভাষাবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে শিশুবয়সে মানুষের দুটো বিভিন্ন ধ্বনির মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা বেশি থাকে, তাই তারা তাড়াতাড়ি নতুন ভাষা শিখতে পারে। জেনি বলে আমেরিকান এক কিশোরী তার জীবনের প্রথম তেরো বছর মানব-সংস্পর্শ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সে বাকি জীবনে আর কোনো ভাষা শিখে উঠতে পারে নি। একই কারণে শিশুবেলার স্মৃতি খুব অস্পষ্ট – সাধারণত মানুষ মনে রাখতে পারে না।
স্মৃতি ও জ্ঞান আহরণ
কিন্তু তাহলে স্মৃতি কি করে কাজ করে? যদি নিউরোন কমেই যায় তাহলে মানুষ কি প্রাপ্তবয়স্ক হলে শিখতে পারত? একজন বাঙালী যখন হিন্দি শেখে তখন সে প্রতিটি বাংলা শব্দের হিন্দি প্রতিশব্দ মনে রাখার চেষ্টা করে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার মস্তিষ্কে ভাষার জায়গাতে তো আগেই বাংলা শব্দগুলো বসে আছে, প্রতিশব্দগুলো যাবে কোথায়?
জ্য পিয়ের শানগেক্স ধারণা করেন জন্ম থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত নিউরোন শুধু কমে চলে না, সাইন্যাপ্স বা সংযুক্তিগুলো বাড়া কমা চলে। এদের সংখ্যায় বাড়া-কমা নিয়ন্ত্রিত হয় ওই অংশে কতটা সঙ্কেত পরিবাহিত হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে। নিউরোন-সংযোগের এই ধর্মকে ডারউইনের ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ তত্ত্বের কথা মাথায় রেখে নাম দেওয়া হয় নিউরাল ডারউইনিসম। প্রতিটি নতুন শিক্ষা বা নতুন জ্ঞান আমাদের মস্তিষ্কে নিউরোনের ও তাদের সংযুক্তিগত বিন্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে জায়গা করে নেয়। শানগেক্স তার এই ধারণার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেননি। সম্প্রতি উইলিয়াম গ্রীনাফ দেখিয়েছেন যে, কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে, প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুরের মস্তিষ্কে নিউরোন-সংযোগের সংখ্যা ২০% অবধি বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এখন বলা হয়, সংযোগ বাড়া-কমার মাধ্যমেই জীব নতুন জিনিস শেখে।
আসলে, প্রতিনিয়ত মস্তিষ্কে সংযোগ তৈরি হয়, বিলুপ্তও হয়। প্রতিকূল পরিবেশে মস্তিষ্কে বেশী অনুভূতি পরিবাহিত হয় বলে বেশীসংখ্যক সংযোগ বেঁচে যায়, কমসংখ্যক বিলুপ্ত হয়। এভাবেই মস্তিষ্ক অভিযোজিত হয় আর নতুন অভিজ্ঞতা ধরে রাখে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সংযোগ উৎপাদন ও বিলুপ্তি, দুয়েরই হার কমে যায়, তাই প্রাপ্তবয়স্করা শিখতে বেশী সময় নেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে নতুন জ্ঞান, ‘কতটা নতুন’ তার ওপরেও নির্ভর করে সে শিখতে কতটা সময় নেবে, কারণ নিউরোনের বিন্যাস তত বেশি পরিবর্তিত হতে হবে। জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম কেলভিনও এই মতের সমর্থক।
সঠিক কি উপায়ে মস্তিষ্ক স্মৃতি সঞ্চয় করে বা নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, তার স্বপক্ষে এখনো কোনো বাস্তব পরীক্ষা-প্রমাণ নেই। তাই বিষয়গুলো যথেষ্ট বিতর্কিত। একবিংশ শতকে নতুন গবেষণার মাধ্যমে সেই সত্য উদ্ঘাটিত হবে – এরকমই আশা রাখি।
সূত্র –
১) http://faculty.ed.uiuc.edu/g-cziko/wm/05.html
৩) http://www.stevenharris.com/theory/085.htm
আগাস্ট ১, ২০০৭
diganta_sarkar@yahoo.com
দিগন্ত সরকার, কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞান লেখক।