রিলিজুলাস

বন্যা আহমেদ এবং অভিজি রায়

 

দেখছেন নাকি কেউ বিল মারের নয়া মুভি – ‘রিলিজুলাস’? না দেখলে সময় কইরা দেইখা ফালান। আমেরিকার মুভি থিয়েটারে হপায় আইছে। নিশ্চয়ই অন্যান্য দেশেও পাওয়া যাইবো কিছুদিনের মধ্যেই। যারা ধর্মের বিভিন্ন মিথ আর বেবাক কিসিমের মামদোবাজি আর ধান্দাবাজি কম সময়ে জনাতে ইচ্ছুক, কিন্তু তিন মন ওজনের পাহাড় সাইজের সব কিতাবগুলান পইড়া উঠনের সময় কইরা উঠতে পারতাছেন না,  তাগো লাইগ্যা এই মুভিটা ‘মাস্ট সি’ টাইপের। বিভিন্ন ঠাট্টা মশকরার মাধ্যমে বেশ কিছু কঠিন বিষয়রে সহজভাবে তুইলা ধরা হইছে।  যদিও বিল মার নিজে কইছে, এই মুভিটায় কারো প্রতি কোন অঙ্গুলি-নির্দেশ করেন নাই, তিনি নিজে কারো প্রতি ‘জাজমেন্টাল’ হন নাই, কিন্তু আমাগো মনে হইছে যাগো ‘ধর্মানুভুতি’র  কাঠি খুব তীক্ষ্ম, তাগো এই মুভির আশ পাশ দিইয়া না যাওনই ভালা হইব।  

 

গত উইকএন্ডে ঘরে তেমন কাম-কাইজ না থাকনে, আমরা হানা দিলাম আমগো বাসার কাছাকাছি মুভি থিয়েটারে। কয়েকদিন ধইরাই সি.নএন.এন আর এম.এস.এন.বি.সি তে এই মুভিটার এড দেখতাছিলাম।  তয় মুভিটা কেমন হইব এইটা লইয়া একটা খচখচানি আছিলো।  বিল মাররে আমরা চিনি কমেডিয়ান হিসেবে। কমেডি সেন্ট্রাল আর এবিসি চ্যানেলে একসময় ‘পলিটিকালি ইনকারেক্ট’ নামে ‘লেট-নাইট টক শো’ করতেন, এখন  এইচবিওতে ‘রিয়েল টাইম উইথ বিল মেহের’ নামে আরেকখান  টক শো শুরু করছেন। ইদানীং বাসায় এইচবিওর চ্যানেল না থাকনে অনেকদিন ধইরা ব্যাটার খোমা দেখতাছিলাম না। ভুইলাই গেছিলাম বিলরে।  ‘রিলিজুলাস’ আবার আমগো মাথায় ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের’  ইমারত বানায় দিছে এক্কেরে।  আলোচনার ভিত্রে যাওনের আগে  মুভিটার ট্রেইলার একটু দেইখা লওন যাইতে পারে –

 

রিলিজুলাস এর ট্রেইলর 

বিল মারের মত কমেডিয়ান ধর্মের ডকুমেন্ট্রি বানাইছে ল্যারি চার্লসের নির্দেশনায় - কিরম হইব কে জানে - এইরম একখান ধারণা লইয়া আমরা দুইজন মুভি হলে হান্দাইলাম।  কিন্তু  মুভিটা শুরু হওনের মিনিটখানেকের মইদ্ধেই সমস্ত সন্দেহ, খচখচানি কর্পুরের লাহান উইবা গেল।  একে তো বিলের প্রত্যেকটা কথার পেছনেই এক ধরনের বাঁকা অর্থ থাকে, তার উপর এমনভাবে মুভিটা বানাইছে যে আপনে যে কিসিমের ‘রামগরুরের ছানা’ই হন না কেন আপনে না হাইসা পারবেন না।  যেমন, মুভিটার এক জায়গায় বিল নিজের ছোটবেলার কথা কইবার লাগছিলো এইভাবে–

 

আমার মা অরিজিনালি আছিলো ইহুদী, আর আমার বাপ আছিলো ক্যাথলিক।  কাজেই আমরা ক্যাথলিক পরিবেশে বড় হইছি- যদিও মাঝে সাঝেই আমার মার ইহুদী মানসিকতা আমার মধ্য দিয়া ফাল পাইড়া বাইর হইয়া আইতো।  যেমন, আমরা যখন সবাই মিল্লা রবিবারে চার্চের ফাদারের কাছে ‘কনফেশন’-এ যাইতাম, আমি লগে একজন আইনজীবী বগলদাবা কইরা লইয়া যাইতাম।  ফাদারের সামনে দাঁড়াইয়া কইতাম ‘ব্লেস মি ফাদার, আই হ্যাভ কমিটেড এ সিন। নাউ প্লিজ মীট মাই ল-ইয়ার মিস্টার কোহেন’!

 

বিল তার ইহুদী মারে জিগাইলো, তুমি তো ইহুদি, আর বাপ আছিলো খ্রিষ্টান, প্রতি রোববার কানে ধইরা চার্চে লইয়া যাইতো, হঠা কইরা বাবা চার্চে যাওন বন্ধ কইরা দিল ক্যান? মা কয়,আমরা তো বার্থ কন্ট্রোল করতাম, যেদিন থেইক্যা অই ব্যাটা পাদ্রী এর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিছে সেইদিন থেইক্যা মনে হয় তোর বাপ আর চার্চের মুখ দেখে নাই; আমারে কোনদিন সত্যি কইরা কয় নাই, তয় আমার ধারণা -এইডাই মনে হয় আসল কারণ।

 

এইরম ঠাট্টা মশকরা আছে সারা মুভিটা জুইরাই।  আরেকবার এক বিশ্বাসী পাদ্রী ভাবালু হইয়া বিল মাররে কইতাছিলো – ‘বিল শোন, একবার এক প্রেমে দিওয়ানা এক লোকরে আমি কইলাম – তোমার যে প্যাশন জাগতিক প্রেমের প্রতি – সেইটারে যদি ধর্মের প্রতি, ঈশ্বরের প্রতি প্যাশনে ট্রান্সফার করবার পারো, চিন্তা করবার পারো, কি হইবো ? ’।

 

বিল মার মনে মনে কইলো – ‘হ, তা পারি বটে!’ আর তখনই পেছনের স্ত্রিনে ভাইসা উঠলো ধরাম কইরা বোমার বিস্ফোরণ আর টাওয়ার ধইস্যা পড়ন।  হ প্যাশনই বটে!

 

আমেরিকার এক সিনেটর মার্ক প্রায়োর – স্বঘোষিত ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিস্টান।  ব্যাটা বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে না। কেন করে না তা বুঝানোর লাইগ্যা নানা তালের গপ্প শুরু করবার লাগছিলো,  বিল মার চিপা দিয়া কইলো – "It worries me that people who are running my country . . . believe in talking snakes, not evolution"

 

মাছের পেটের মইধ্যে হান্দায়া থাইকা যে কোন নবী তিনদিন বাইঁচা থাকবার পারে, আর মানুষজন যে সেইগুলা আবার কেমন খায়, তা এই মুভিটা না দেখলে বুঝন যাইবো না।

 

আরেক জায়গায় দেখাইলো এক মোল্লার (কোন মসজিদের ইমাম হইবো) সাক্ষাকার লইতাছে বিল।  মোল্লায় তো ফ্যানায় ফ্যানায় কইতাছে যে ইসলাম কত শান্তির  ধর্ম, ধর্মগ্রন্থের মইধ্যে ভায়োলেন্সের টিকিটাও নাই...এর মইধ্যে মোল্লার সেলফোনে ক্যাডা জানি কল করছে।  মোল্লায় পাঞ্জাবী থেইক্যা ফোন বাইর কইরা টেক্সট ম্যাসেজে উত্তর দেওন শুরু করছে।  আর ওইদিকে স্ক্রিনে ভাইসা উঠছে টেক্সট ম্যাসেজের কমেডি ভার্শন – 

- বস, আপনের অর্ডার কি?

- বিল মাররে খুন কইরা ফালাইয়া দে!

 

 
রিলিজুলাস এর ছবির একটি দৃশ্য - হোলি ল্যান্ডে যীশুর সাথে বিল মার 

কি না দেখাইলো মুভিতে? ভ্যাটিকান সিটি, মরমন চার্চ থেইকা শুরু কইরা গে-মুসলিম কমিউনিটি, শয়তানের অনুসারী, হেইড পার্ক, সায়ন্টোলজি, পাহাড়ে গায়ে ঘাসের মইধ্যে ল্যাংটা দানব আঁকা পুজারীর দল - কোন কিছুই বাদ পড়ে নাই।  ‘পাস্কালের ওয়েজার’-এর মত দার্শনিক ভিত্তি থেইক্যা শুরু কইরা, ধর্মের অলৌকিকতা, ধর্ম আর নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক, বাইবেলের নানা কিসিমের ভুলভাল, ক্রিয়েশন মিউজিউয়াম, ডায়নোসর আর মানুষের একলগে বসবাস, ফ্লোরিডায় হোলি ল্যান্ডের অভিজ্ঞতা, নানা পদের প্রফেসি-ফ্যান্টাসি সব কিছুই আছে।  যাগো সাক্ষাকার লওন হইছে তাগো মইধ্যে  ভ্যাটিকান মানমন্দিরের জর্জ কোয়েন, ক্যাথলিক পাদ্রী ফাদার রেজিলান্ড ফস্টার, প্যাস্টর জেরিমিয়াহ কামিং, ক্রিয়েশনিস্ট মিউজিয়ামের কেন হ্যাম,  আধুনিক যীশুর দাবীদার  মায়ামির হোসে লুইস জেসুস মিরান্ডা,  প্রোপা-গান্ধি আকি নেওয়াজ, ‘এন্টি জিওনিস্ট’ ইহুদী ড়্যাবাই ইজোরেল দাভিদ ওয়েইস, ধর্মান্ধ সেনেটর মার্ক প্রায়র, ধর্মে বিশ্বাসী বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস কলিন্স, পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ড্রু নিউবার্গ সহ অনেকেই আছে। পৃথিবীর তাবত জায়গা চইষা ফালাইয়া আব্রাহামিক ধর্মগুলার লিডারগো আর তাগো অনুসারীগো বিভিন্ন কথাবার্তা জিগাইয়া হেগো যুক্তিগুলান নাড়া চাড়া কইরা দেখছেন, আর এই থেইকাই একটা উপসংহার টানোনের চেষ্টা করেছেন।

 

বিল মারের মুভিটায় ধার্মিকগো লইয়া খালি বেহুদা তামসা আছে ভাবলে ভুল হইবো। অনেক সিরিয়াস সিরিয়াস বিষয় আশয় আসলে এর মইধ্যে লুকায়া আছে।  জেরুজালেমরে মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী– হগগলতেই ক্যানো ‘পবিত্র’ ভুমি বইলা মনে করে, ক্যানো সবাই ওই জায়গাটার দখল চায় – হেইটা ইতিহাস থেইক্যা তুইলা ধরছেন মার।   আবার, ইহুদী, খ্রীস্টানদের অনেক কিছু থেইক্যা ইসলাম ধার করছে আমরা হেইটা অনেকেই জানি।


বাইবেলে বর্নিত যীশুর কাহিনী মৌলিক কিছু নয়। প্রাচীন মিশরের হোরাসের কাহিনীর সাথে মিল কি নেহাতই কাকতালীয়?

আদম হাওয়ার গল্প সেইরকম একটা পৌরাণিক কাহিনী।  অনেকেই ভাবে গল্পটা খ্রীস্টানদের থিকা মাইরা দিছে মুহম্মদ, হের লাইগ্যাই কোরাণে আদমের কথা আছে। হইবার পারে,  কিন্তু খ্রিস্টানদের এই গল্পটাই বা কতটুকু মৌলিক – এই প্রশ্ন কয়জন করে?  বিল মার দেখাইছেন যে,  বাইবেলের গল্পগুলানো মৌলিক কিছু না;  যীশুর ভার্জিন বার্থ, ঈশ্বরের পুত্রের ধারণা, ব্যাপ্টিজম, বারোজন ডেস্পিকেল সহ  গাদাখানেক

জিনিসপত্তর প্রাচীন মিশরীয় ‘হোরাস’এর কাহিনীর সাথে অবিকল মিল্ল্যা যায়।  হোরাস আর যীশু কাহিনীর মধ্যকার মিল দেখাইয়া ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটেও আছে।  গুগল সার্চ দিলেই সেইগুলান বাইর হইয়া আইবো। কিন্তু এর থেইকা কি বুঝন যায়? বুঝন যায়, এই ধরনের উপাখ্যান বহু আগে থেইকাই মানুষের মইধ্যে আসলে ছড়ায় ছিটায় আছিলো।  হের লাইগ্যা শুধু হরাস না, ওসিরিস-ডাইয়োনেসুস, তাম্মুজ, মিথ্রাস সহ অনেক পৌরাণিক উপকথার সাথেই যীশুর উপাখ্যানের মিল পাওন যায় আইজ।  এই ব্যাপার স্যাপার গুলান জানন যায়  মুভিটা দেখলে।  

 

 

 
সিএনএন- এর ল্যারি কিং লাইভ এ বিল মার

মুভিটার রিভিউ যখন করতাছি,  কিছু তত্ত্ব কথা কওনের লোভ সামলাইতে পারতাছি না। একে তো আমেরিকা এই মুহূর্তে হইতাছে গিয়া উন্নত বিশ্বের দেশগুলার মধ্যে সবচাইতে ধার্মিক এবং রক্ষণশীল দেশ, তয় আবার আমরা থাকি সেই দেশের মধ্যেও অন্যতম বড় খ্রিষ্টান কাঠমোল্লাদের জায়গা জর্জিয়ায়। আমেরিকার দক্ষিণের এই জায়গাটারে কয় বাইবেল বেল্ট। সেইখানের একটা মুভি হলে এইরম একটা মুভি দেখতে গিয়া হাউজফুল দর্শক পাওন, আর পদে পদে তাগো তালি আর ‘হাঃ হাঃ,  হিঃ হিঃ’ কইরা অট্টহাসি শুইনা বোঝা যায়  মারের প্রচেষ্টা জলে যায় নাই এক্কেরে।  তয় আমরা অবাক না হইয়া পারি নাই - গত কয়েক দশক ধইরা সারা বিশ্ব জুইড়া আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের মারমার কাটকাট ভূমিকা আর তার সাথে রাষ্ট্রের সালামীপুষ্ট রক্ষণশীল খ্রিষ্টানদের লাফালাফির গতি কি তাইলে আপাতত নীচের দিকে? সারা আমেরিকা জুইড়া অর্থনৈতিক অবস্থার যে দুর্গতি দেখা যাইতাছে, মনে তো হয় পাহাড়ের গা বাইয়া পইড়া যাইতে আর বেশী দেরি নাই। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ভুমিকা যত কমতে থাকবো সেই সাথে পাল্লা দিয়া কি এই দেশটায় ধর্মের উন্মাদনাও পাল্লা দিয়া কমতে শুরু করবো? অনেক বিশ্লেষনই কিন্তু সেইদিকেই আঙ্গুল দিয়ে দেখাইবো। গত একশো বছরে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী ভুমিকা যত কমসে ততই কিন্তু মহাদেশ জুইড়া ধর্মের প্রভাব কমতে শুরু করসে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন অর্ধেকেরও বেশী মানুষ কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না। সুইডেনে ৮৪%, ফ্রান্সে ৫৪%, ইংল্যন্ডে ৪৪%, আর ওদিকে জাপানে নাকি ৬৫% মানুষই নাকি আর ধম্মকর্মে বিশ্বাস করে না।  সেইখানে আমেরিকায় এই অবিশ্বাসীগো সংখ্যাটা মাত্র ১৬%।

 

আসলেই পুজিবাদী রাষ্ট্র যে কেম্নে ধর্মরে টিকায় রাখে সেইডা আমেরিকায় বইসা না দেখলে এত ভালো কইরা বুঝতাম না। আগে দেশে থাকতে মনে হইতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এইডা বেশী দেখা যায়, সৌদী পয়সায় উঠবোস সরকার আর করবোই বা কি। ব্যাপারটা কিন্তু লক্ষ্য করার মত, কোন দেশ বা জাতি যখন তার অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে বা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তখন কিন্তু তারা অনেক বেশী সেকুলার হইয়া যায়, আমরা বাংলাদেশে একাত্তুরে তাই দেখছি, ষাটের দশকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আফ্রিকান আমেরিকানদের দেখছি, ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ করা তথাকথিত হিপ্পিদের দেখছি। সারা পৃথিবীতেই এই নিদর্শনের অভাব নাই। তারপর আবার যখন সবকিছু একটু ঠিকঠাক হইয়া আসতে শুরু করে তখন রাষ্ট্র ক্রমাগত ভাবে আবার ধর্মের ইঞ্জেকশানের স্লো ডোজ নিয়া হাজির হয়। বিন লাদেন তৈরি হয় রাশিয়া-আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী কামড়াকামড়ির ফসল হিসাবে, তালেবানরা তৈরী  হয় সরাসরি আমেরিকার পয়সায়, সৌদী বাদশাগিরী টিইক্য থাকে আমারিকার সৈন্যদের পেশী শক্তি দিয়া, আমাদের মত দেশগুলাতে মাদ্রাসার পাহাড় গইড়া ওঠে আবার সৌদি পেট্রো-ডলারে।

 

সাম্রাজ্যবাদী মহাশক্তিগুলার জনগনের বিশাল অংশও যে ডাকাতির পয়সা ভোগ করতে করতে দিন দিন পচনের দিকে গায় তাও এখানে থাইকাই বুঝতে পারলাম। আমেরিকা যেদিন ইরাক আক্রমণ করলো তার পরের দিন অফিসে গিয়া শুনি বেশীরভাগ লোকই এই যুদ্ধের পক্ষে, একজন তো বইলাই বসলো যে বোমা ফালায় শেষ কইরা দিকনা, তাতে আমার কি, বুশ যদি গ্যারান্টি দিতে পারে যে বিনা পয়সায় ইরাক থ্যাইক্কা গ্যাস আইনা দিতে পারবো তাইলেই আমি খুশী।  আমারিকান সৈন্য না মরা পর্যন্ত ওদের কিন্তু গায়েও লাগে না, যুদ্ধের সমস্ত ইন্টেলিজেন্স মিথ্যা ছিল জাইনাও ওরা আবার বুশরেই ভোট দিয়া দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেণ্ট বানায় .....যাউগ গা, বেশী রাজনীতি আর অর্থনীতির কচকচানীতে না ঢুইকা আবার চলেন রিলিজুলাস এ ফিরা যাই।

 

রেলিজুলাস এ আরেকটা মজার জিনিস দেখাইসে। গত এক দশকে আমেরিকায় নাস্তিকের সংখ্যা ৮% থেইক্কা বাইড়া প্রায় ১৬% হইছে। ১৬ সংখ্যাটা এমনিতে কম মনে হইলেও, তুলনামূলক বিচারে এই অবিশ্বাসীদের সংখ্যাটা একেবারেই ফালাইয়া দেওনের মত না। তাদের সংখ্যা আফ্রিকান আমেরিকান,  ইহুদী, হিস্পানিক, শিক্ষক সম্প্রদায়,  এমনকি গে-লেজবিয়ানদের কমিউনিটির চাইতেও ঢের বেশী, অর্থা তারা এখানকার একটা বড়সড়  মাইনরিটি, কিন্তু তাদের মতামতের কোন ‘ঐক্যবদ্ধ প্রকাশ’ বা ‘ইউনিফায়েড ভয়েস’ নাই কোন কিছুতে। বিল মারের মুভিটা সেই দিক দিয়া ব্যতিক্রম। আমেরিকায় গত কয়েক দশকে তথাকথিত লিবারেল মিডিয়ারে  সামাল দেওয়ার নাম কইরা এক বিশাল রক্ষণশীল মিডিয়া বিজনেস গইড়া উঠসে। এ দেশে না আসলে বুঝতে পারতাম না যে ‘লিবারেল’ হওয়াটা একটা লজ্জাকর বিষয়, লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্বাস করা মানেই হইতেসে আপনি আসলে তথাকথিত বেজন্মা সোশালিষ্ট অথবা আ্যনারকিষ্ট। বারাক ওবামার মত মাঝামাঝি অবস্থানের একজন রাজনীতিবীদএর নামে সবচেয়ে বড় অভিযোগ যে সে নাকি অন্যতম লিবারেল রাজনীতিবিদ, তারে ভোট দিলে তো দেশটাই উচ্ছন্নে যাইবো, দেশ নাকি সমাজতন্ত্রে চইলা যাইবো!  

 

মুভিটার আরো কিছু বিশেষত্ব ভালা লাগছে । মুভিটা দেইখা যে কেউ ‘নাস্তিক্যবাদী সিনেমা হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারেন, কিন্তু ঠিকমত দেখলে আর চিন্তা করলে বুঝবেন মুভিটার কোথাও ‘নাস্তিক’ শব্দটা উচ্চারণ করা হয় নাই।  এই মুভিটার কোনখানে রিচার্ড ডকিন্স, ক্রিস্টোফার হিচেন্স, স্যাম হারিস কিংবা তেমন কোন কট্টর নাস্তিকের কোন সাক্ষাকার নেওয়া হয় নাই।  মুভিটার লাইগ্যা হেই ধরনের ‘সাপোর্ট’ দরকারই পড়ে নাই আসলে। বিল মার বিভিন্ন ঠাট্টা মশকরার মাধ্যমে যেইটা উপস্থাপন করছেন, সেইটা সাধাসিধা বাংলায় – সংশয়’। তার নিজের কথাতেই – ‘ডাউট ইজ হাম্বল’।  আসলে এইটাই পুরা মুভিটার উপসংহার।   

 

রেলিজুলাস নামকরণ কেন করছে – মুভিটা দেখতে বইসা বুঝি নাই। বুঝলাম এখন মুভিটার রিভিউ লিখতে বইস্যা। আমার মনে হইছে রিলিজুলাস তৈরি করা হইছে দুখান শব্দের কম্বিনেশনে।  ‘রিলিজিয়ন’ + ‘রিডিকুলাস’ = রিলিজুলাস !  অনুমানটা ঠিক হইলে নামকরণের সার্থকতা লইয়া মেট্রিকের সিলেবাসে রচনা লিখবার দিলে  দশে দশ পাওন কেউ ঠেকাইতে পারবো না।

 

রিলিজুলাসের উপর আরো কিছু ভিডিও (ইউ টিউবের সৌজন্যে)

 

 

 

অক্টোবর ৬, ২০০৮


বন্যা আহমেদ, আমেরিকা প্রবাসী লেখক পেশায় কম্পিউটার প্রকৌশলী সর্বশেষ বই – ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ (২০০৭)তার বিভিন্ন প্রবন্ধ বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ও দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে ইমেইল : bonna_ga@yahoo.com

 

ড. অভিজি রায়, আমেরিকায় বসবাসরত গবেষক এবং বিজ্ঞান লেখক। তিনি মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক সাম্প্রতিক সম্পাদিত গ্রন্থ – ‘স্বতন্ত্র ভাবনা’।  ইমেইল : charbak_bd@yahoo.com